জিভে জল আনা ‘হাছুর চ্যাপা’
চ্যাপা শুঁটকির কথা শুনলে নাক সিঁটকায় অনেকে। তবে অনেকের কাছেই চ্যাপা মানে জিবে জল আসা এক খাবার। ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার হাছু মিয়ার নিজ হাতে তৈরি সিঁদলের নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। নান্দাইল পৌরসভা বাজারের রাস্তার পাশে সপ্তাহে তিন দিন বসেন হাছু মিয়া। বিক্রি করেন নিজ হাতে প্রস্তুত করা চ্যাপা । পণ্যের গুণগত মান ও গ্রাহক চাহিদায় গ্রামের এই ব্যক্তি নিজেই তৈরি করেছেন ব্র্যান্ড- 'হাছুর চ্যাপা'।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে নান্দাইল উপজেলায় পৌর র্মাকেটে সরেজমিনে দেখা যায়, ভিড় লেগেই থাকে এই দোকানে। নান্দাইল উপজেলার সাভার গ্রামের হাছু মিয়া এই ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে গত চার বছরে তার সুনাম ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। শনি, সোম ও বুধবার দোকানটি খোলার পরপরই ক্রেতাদের ভিড় জমে যায়। প্রতি কেজি সিঁদল ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
সিঁদল কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা ফয়জুননেসা বলেন, 'বাজারে অনেক চ্যাপাই আছে। তবে সব একরকম না। আমি সারাবছর এখান থেকে চ্যাপা কিনি।'
কিশোরগঞ্জ থেকে হাছুর চ্যাপা কিনতে আসা রুকন উদ্দিন বলেন, 'এই চ্যাপার মান ও ঘ্রাণ অন্যদের থেকে আলাদা। বাড়িতে মা এই চ্যাপা ছাড়া অন্য চ্যাপা খান না তাই কিনতে আসা।'
জানা গেলো বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ নানা মাধ্যমে বা নিজেরা এসে এই চ্যাপা কেনেন।
হাছু মিয়া নিজে বাজারেই বিক্রি করেন তবে তার কাছ থেকে অনেকে সংগ্রহ করে অনলাইনে বা ফেসবুক পেইজের মাধ্যমের দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। হাছু মিয়া জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যেসব বাঙ্গালি থাকেন তাদের একটি অংশও তার ক্রেতা। দেশ থেকে যাওয়ার সময় বা ছুটিতে আসলে তার কাছ থেকে সিঁদল কিনে নিয়ে যান।
বছরে ৩৫ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি করেন হাছু মিয়া। রেখেছেন দুই সহযোগী। বাড়িতে সিঁদল প্রস্তুতে সহযোগিতা করে তার পরিবার। তিনি জানান সিঁদল প্রস্তুত করতে প্রয়োজন ভালো মানের পুঁটি মাছ। পুঁটি মাছ জোগাড়ের পর ভালোভাবে বাছাই করে বিশেষ উপায়ে কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে নিতে হয়। ধুয়ে পরিষ্কার করে হালকা রোদে শুকাতে হয়। বেশি শুকালে সমস্যা, আবার কম শুকালেও হবে না চ্যাপা। এরপর মাটির তৈরি মটকায় রাখা হয়। মটকা প্রস্তুতের পর মটকার পরতে পরতে পুঁটি সাজিয়ে রাখা হয়। পরে মটকার মুখ বন্ধ করে ছয়-সাত মাস মাটির গর্তে রেখে তৈরি হয় চ্যাপা।
হাছু মিয়া জানান, চ্যাপা তৈরিতে তিনি লবণ ব্যবহার করেন না। এছাড়াও আরো কিছু প্রক্রিয়া আছে হাছু মিয়ার ভাষ্যে যা 'যা বলা যাবে না'। এসব কৌশলের কারণে চ্যাপার মান ভালো হয়।
তার ভাষ্যে, 'পণ্যের গুণগত মান ভালো থাকলে ক্রেতারা পণ্য খুঁজে খুঁজে বের করবে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।'
এদিকে মান ঠিক রেখে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও হাছু মিয়া তা করতে পারছেন না। খালবিল, হাওর, নদীনালায় পুঁটি মাছের পরিমাণ কমছে। বর্তমানে মাছ সংগ্রহই বড় চ্যালেঞ্জ তার।