ইসির রোডম্যাপে পরস্পরবিরোধী তথ্য, ‘ভুল হতেই পারে’ বললেন কমিশনার
ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্যের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা বলেছেন, ভুল হতেই পারে। কমিশন যে কোনো অসঙ্গতি খুঁজে পেলে তা ঠিক করবে, বলেন তিনি।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বলেন, "আমার কাছে এই মুহূর্তে রোডম্যাপ নেই। তাই এই ভুল সম্পর্কে মুখস্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। রোববার অফিসে গিয়ে দেখব।"
নির্বাচন কমিশন বুধবার একটি রোডম্যাপে প্রকাশ করে জানায়, তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করবে।
আর ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ইসির সংলাপে অংশ নেয়া ২৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে বানোয়াট তথ্য দিয়েছে ইসি।
ইসির রোডম্যপে বলা হয়েছে, ইসির সংলাপে অংশ নেয় ২৯টি রাজনৈতিক দল। এরমধ্যে সরাসরি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পক্ষে মত দিয়েছিল ১২টি দল, সরাসরি বিপক্ষে ছিল ৬টি এবং শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম এর পক্ষে ছিল ১১টি রাজনৈতিক দল।
সেই অনুযায়ী মোট ২৩টি রাজনৈতিক দল সরাসরি ও শর্ত সাপেক্ষে ইভিএমের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু একই রোডম্যপে পরে একটি তালিকায় নাম দিয়ে ১৭টি রাজনৈতিক দলকে ইভিএম এর পক্ষে ও ১২টিকে বিপক্ষে বলে উপস্থাপন করা হয়।
ইসির তথ্যে গরমিল এখানেই শেষ নয়। ছকে ইসি যে ১৭টি রাজনৈতিক দলকে ইভিএমের পক্ষের দল হিসেবে উপস্থাপন করেছে সেটাও ভুল তথ্যের উপর।
সংলাপে দলগুলোর দেওয়া লিখিত প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৭টির মধ্যে ৩টি দল--বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন-- ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছিল। তারপরও তথ্য বিকৃত করে এদের ইভিএমের পক্ষে মত প্রদানকারী দল হিসেবে দেখানো হয়েছে রোডম্যপে।
গত ১৮ জুলাই সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ইভিএম নিয়ে লিখিত প্রস্তাবে বলে, ইভিএমে নয়, স্বচ্ছ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরেরদিন ১৯ জুলাই সংলাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১৫ দফা প্রস্তাবনায় ইভিএম নিয়ে কিছুই উল্লেখ করেনি, তারা সরাসরি আগামী জাতীয় নির্বাচন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে করার প্রস্তাব করে। ২৪ জুলাই বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, "এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। ইভিএমের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। ইসির রোডম্যাপে তা বিকৃত করা হয়েছে।"
"নির্বাচনের আগে তারা এমনটা করলে নির্বাচনে কী হবে?" তিনি জিজ্ঞাসা করেন।
এছাড়া ১৭টি দলের মধ্যে ৯টি আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে কিছু শর্ত দিয়েছিল। এছাড়া ১টি দলের ইভিএম নিয়ে কোনো মতামতই ছিল না।
ফলে ইভিএমের পক্ষে সরাসরি অবস্থান ছিল মাত্র চারটি দলের। এগুলো হলো আওয়ামীলীগ এবং তাদের জোট ও সমমনা তরীকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল এবং বিকল্পধারা।
অর্থাৎ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল জাতীয় ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে হলেও ভুল তথ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন বেশির ভাগ দল ইভিএমের পক্ষে নিয়ে এসেছে।
এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের শেষ দিনে আওয়ামী লীগের সাথে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না।
দেখা গেছে যেসব দল--জাকের পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যশনালিস্ট ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি)--নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শর্ত দিয়েছে, তার কিছু পক্ষে ও কিছু বিপক্ষে নিয়ে তারা রোড়ম্যপে তালিকা প্রস্তুত করেছে।
বুধবার আগামী নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনায় ইসি দাবি করে, সংলাপে বেশিরভাগ দলের মত ইভিএমের পক্ষে থাকায় এটি ব্যবহার না করা যুক্তিসংগত হবে না।
পক্ষের দল ভারি করার সমালোচনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন টিবিএসকে বলেন, "ইভিএম নিয়ে লুকোচুরি করে কোন লাভ নাই।"
"এর পক্ষের দলের সংখ্যা বেশি দেখিয়েও কোন লাভ হবে না যদি না জনগণের আস্থা অর্জন করা যায়," বলেন তিনি।
"আমরা ইভিএমের ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত লিখিতভাবেই ইসিকে দিয়েছিলাম। তারা আমাদের সরাসরি পক্ষে ভাবলে ভুল করেছে," যোগ করেন মেনন।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার টিবিএসকে বলেন, "তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এটি প্রতারণা এবং তারা ইতোমধ্যে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।"
এছাড়া সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি সহ নয়টি দল। তবে তারাও ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।