ভারতীয় চোরাই সেলফোন যেভাবে বাংলাদেশে আসে
সেলফোন চুরির র্যাকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত মাসে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ভারতের মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। গ্রেপ্তারের পর এই দলের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগসূত্র মিলে।
এই ঘটনায় সেলফোন পাচারে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের গ্রামবাসী থেকে শুরু করে ভারতের শহুরে কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর সম্পৃক্ততা উঠে আসে।
আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ভারতের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং ২২ লাখ রুপি (১ রুপি= ১.১৮ টাকা) মূল্যের ১৩৫টি চুরি করা সেলফোন উদ্ধার করে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় যাদের মধ্যে একজন ভারতে ত্রিপুরা সীমান্তের এক গ্রামে বাস করেন।
চোরাই ফোন বাংলাদেশে কীভাবে পাচার করা হয় সেসব তথ্য তিনি খোলাসা করেন বলে জানায় ভারতীয় পুলিশ।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মুম্বাই থেকে চুরি করা সেলফোনের ছবি ও বিশদ বিবরণ একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে আপলোড করে চোরাচালানকারীরা। এই গ্রুপে বাংলাদেশি ও কয়েকজন নেপালিও রয়েছে।
চুরি হওয়া ফোনগুলো কেউ পছন্দ করেলে সেগুলো প্যাকেট করে বাংলাদেশে পাঠানো হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্যাকেটগুলো এরপর দক্ষিণ মুম্বাইয়ের একটি কুরিয়ার কোম্পানিতে পাঠানো হয়, যাদের ত্রিপুরার আগরতলায় অফিস রয়েছে।
'আগরতলায় পার্সেলগুলো গ্রহণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তি জঙ্গলে ছেয়ে থাকা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ফাঁকফোকড় দিয়ে সেগুলো পাচার করে,' জানান সেই কর্মকর্তা
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে আরও তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে যাদের কাজ এসব চোরাই ফোন সংগ্রহ করে দেশে বিক্রি করা।
'অপরাধীরা সেলফোনগুলো ভারতের বাইরে বিক্রি করে যাতে তাদের সেলফোনের আইএমইআই নাম্বার মুছে ফেলার জন্য অর্থ ব্যয় করতে না হয়, যার ভিত্তিতে পুলিশ তাদের শনাক্ত করতে পারে,' বলেন তিনি।
একবার ফোন অন্য দেশে চলে গেলে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইএমইআই নাম্বার দিয়ে বেশিকিছু করতে পারে না।
তিনি জানান, অবৈধভাবে আইএমইআই নাম্বার মুছে ফেলে এমন সব সেবাদাতার বিরুদ্ধে ভারতে সাম্প্রতিক পুলিশি অভিযানের ফলে অপরাধীরা সীমান্তের ওপারে সেলফোন পাঠানো শুরু করেছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত তারা এক কোটি রুপি মূল্যের চুরি হওয়া সেলফোন উদ্ধার করেছে।
'মডিউলের অংশ হিসেবে তিনজন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হলেও এই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। আমরা কীভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি সে সম্পর্কে আইনি পরামর্শ নিচ্ছি,' বলেন তিনি।
এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় ৩৯ লাখ ২৯ হাজার রুপি মূল্যের মোবাইল ফোন জব্দ করে।
সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের অধীনে বর্ডার আউট পোস্ট সুখদেবপুরে নিযুক্ত বিএসএফ-এর ৭০ ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা শুক্রবার গভীর রাতে আন্তর্জাতিক সীমান্তে ৩৫৯টি মোবাইল ফোনের চালান আটক করে বলে এএনআই প্রতিবেদনে জানা গেছে।
বিএসএফ গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। বিএসএফ জানায়, 'বর্ডার আউট পোস্ট সুখদেবপুরের সৈন্যরা ১০ থেকে ১২ জন সন্দেহভাজন চোরাকারবারিকে বান্ডেলসহ কাঁটাতারের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে'।
'কিন্তু সৈন্যদের আসতে দেখে চোরাকারবারিরা ঘন অন্ধকার এবং ঝোপের ভেতর পালিয়ে যায়। এর পরে জওয়ানরা তল্লাশি অভিযান চালিয়ে কাঁটাতারের কাছে মাটির গর্ত থেকে আটটি ব্যাগ উদ্ধার করে,' জানায় বিএসএফ।
উদ্ধারকৃত ব্যাগগুলো থেকে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। জব্দ করা মোবাইলগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩,৯২৯,০০০ রুপি।
চক্রের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন ভারতীয় ব্যক্তির নাম সামনে এসেছে।
বৈষ্ণবনগর থানায় ওই চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জব্দ করা মোবাইল ফোনগুলো সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
৭০ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিএসএফ কঠোর হয়েছে। ফলে চোরাচালানে জড়িত অপরাধীরা সুবিধা করতে পারছে না। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।