স্কুলের সামনে ময়লার ভাগাড়, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর শিশু শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সায়মা হককে প্রতিদিন সকালে স্কুলে নিয়ে আসেন তার মা শামসুন্নাহার বেগম। তিনি মেয়েকে নিয়ে বিদ্যালয়ের সামনের ফটক দিয়ে প্রবেশ না করে অন্য পাশের ফটক দিয়ে প্রবেশ করেন নাক চেপে। কারণ প্রধান ফটকের সামনের রাস্তার বিপরীতেই রয়েছে একটি ময়লার ভাগাড়, যেখান থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট দূর্গন্ধ।
শামসুন্নাহার বেগম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্কুলের সামনেই ময়লার ভাগাড় হওয়ায় নাক চেপেই স্কুলে প্রবেশ করতে হয়। অনেক সময় এখানে বর্জ্য না থাকলেও দূর্গন্ধ আসে। স্কুলের ভিতরেও দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।"
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন। ভোর ৭ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত চলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। শুধু তাই নয়, এর ১০০ মিটার সামনেই রয়েছে র্যাব-২ এর অফিস।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন টিবিএসকে বলেন, "আমরা মাঠে সবসময় খেলতে পারি না। অধিকাংশ সময়ই দূর্গন্ধ থাকে। ক্লাসে বসেও অনেক সময় টেকা যায় না। আর রাস্তার এ অংশ পার হতে গেলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।"
এ অভিযোগ শুধু সাব্বিরের নয়, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রত্যেকেরই, পাশপাশি এলাকায় বসবাসকারী এবং রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদেরও।
আশপাশের আবাসিক এলাকার ভবনগুলো থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে স্কুলের সামনেই জমিয়ে রাখা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, রাস্তার উন্নয়ন কাজে ওই এলাকায় থাকা স্থায়ী ময়লার ভাগাড়টি ভাঙ্গা পড়ায় স্কুলের সামনে অস্থায়ী কন্টেইনারে বর্জ্য রাখা হয়। নতুন একটি এসটিএস (সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) নির্মাণের কাজ চলছে এবং ওই এলাকার জন্য জমিও খোঁজা হচ্ছে। অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানেই ময়লা রাখতে হচ্ছে তাদের।
বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা বলছেন, তারা সিটি কর্পোরেশনে বারবার অভিযোগ জানানোর পরেও এখান থেকে ময়লার ভাগাড় সরানো হয়নি। লিখিত আবেদন করেও মেলেনি পরিত্রাণ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আম্রপালী বসাক টিবিএসকে বলেন, "আমরা স্কুলের সামনে থেকে ময়লার এই ভাগাড় সরাতে গত এক বছর ধরে বলে আসছি; সিটি কর্পোরেশনের অফিসে চিঠিও দিয়েছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।"
"স্থানীয় কাউন্সিলরের স্ত্রী আমাদের স্কুলের সভাপতি হওয়ায় তাকেও বারবার বলেছি বিষয়টি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। এখন বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশের গেইট বন্ধ রাখতে হচ্ছে," যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় কাউন্সিলর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান টিবিএসকে বলেন, "আমরা ওই এলাকার মানুষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই অস্থায়ী ভাগাড়টি দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম আমাদের স্থান নির্বাচন ভুল হয়েছে। এখন সিটি কর্পোরেশন থেকে ওখানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ রয়েছে, কিন্তু স্থানীয় লোকজন ওখানে বর্জ্য ফেলছে, সেগুলো আমরা রাতে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা খুব শীঘ্রই ওই স্থান থেকে অস্থায়ী ভাগাড়টি সরিয়ে ফেলবো। নতুন করে ভাগাড় তৈরির জন্য জমিও খুঁজছি।"
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান ভূঁইয়া টিবিএসকে বলেন, "আমরাও চাই বর্জ্য মানুষের সমস্যা সৃষ্টি না করুক, কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকার একটি এসটিএস ভাঙতে হয়েছে রাস্তার উন্নয়নের কাজের জন্য। তাই অন্য কোথাও জায়গা না থাকায় স্কুলের সামনে অস্থায়ী কন্টেইনারে বর্জ্য রাখতে হচ্ছে।"
"আমাদের ওই এলাকার বর্জ্য সমস্যা সমাধানের জন্য একটি আন্ডারগ্রাউন্ড এসটিএস নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এটি তৈরি হয়ে গেলে আশাকরি সমস্যা কেটে যাবে," যোগ করেন তিনি।