জরুরি শ্রম ঘাটতি পূরণে ১০ হাজার বাংলাদেশি নিবে মালয়েশিয়া
শ্রম ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বিওইএসএল)-এর মাধ্যমে অবিলম্বে ১০,০০০ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু করেছে মালয়েশিয়া।
শুক্রবার মালয়েশিয়ান এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (এমইএফ)-এর এক চিঠিতে বলা হয়েছে, 'মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী কর্মী নিয়োগের জন্য একটি এককালীন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।'
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ২৫টি বেসরকারি বাংলাদেশি এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পর্যাপ্ত কর্মী না পাওয়ায় দেশটি নতুন এককালীন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
বিওইএসএল-এর মহাব্যবস্থাপক (বৈদেশিক কর্মসংস্থান) বনানী বিশ্বাস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। চাহিদা জানিয়ে দেওয়া চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শ্রমিক পাঠানো শুরু করব।'
এর আগে মালয়েশিয়া মাত্র ২৫টি বাংলাদেশি সংস্থাকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়। তারা একটি সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত।
অভ্যন্তরীণ কর্মরতরা বলছেন, আরও ২৫টি সংস্থার কর্মী পাঠানোর অনুমতি লাভের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান বলেছেন, বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো অল্প সংখ্যক উৎস দেশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অভিবাসী শ্রমিকদের আসতে দেরি হওয়ার পেছনের মূল কারণ।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাস্টমার মিট ডে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'সমস্যা হলো নিয়োগকর্তারা ভাষা, ধর্ম ইত্যাদির কারণে শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ান এবং বাংলাদেশিদের নিয়োগ করতে পছন্দ করেন।'
তবে শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেশন বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধীরগতির নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রধান কারণ।
তারা দুর্বল পারফরম্যান্সের এই সিন্ডিকেশনে জড়িত থাকায় মালয়েশিয়ান মন্ত্রীকেও দায়ী করেন।
'আমরা গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছি। এরপর থেকে মাত্র ১,২০০ জন মালয়েশিয়ায় গেছেন,' বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-র মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন।
'২৫টি সংস্থা যারা কাজ করছে তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছে না। বেশিরভাগের ব্যবসায়িক প্রোফাইল ঘাটলে দেখা যাবে গত ৫-১০ বছরে তারা কখনও বড় সংখ্যক কর্মী পাঠায়নি। এর অর্থ অভিজ্ঞতার দিক থেকে তাদের বড় ঘাটতি রয়েছে," বলেন তিনি।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, 'লাভজনক সিন্ডিকেট নিয়ে সারাভানানের কথিত পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। এতে শ্রমিক সংকটসহ শিল্পগুলো এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন। তিনি যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা একটি ইউ-টার্ন হবে।'
২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত এমওইউ অনুযায়ী, পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ মানুষ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাবে।
চুক্তিটি বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উত্পাদন, পরিষেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালী পরিষেবাসহ সকল খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সূচনা করে।
এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, এক বছরে দুই লাখ কর্মী মালয়েশিয়া যাবে।
তাদের ন্যূনতম বেতন হবে প্রতি মাসে ১,৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত এবং অভিবাসন ব্যয় হবে ৭৯,০০০ টাকা।
তবে বাস্তবে বেসরকারি সংস্থায় অভিবাসন ব্যয় হিসেবে শ্রমিকদের প্রায় সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা দিতে হয়।
এমইএফ অনুসারে বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থায় অভিবাসন খরচ ৪২,০০০ টাকা।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-র মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম টিবিএসকে বলেন, 'সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বোয়েসল-এর মাধ্যমে নির্ধারিত বেসরকারি সংস্থাগুলোর বাইরে গিয়ে লোক পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই।'
উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের অভিযোগে মালয়েশিয়া ২০১৮ সাল থেকে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়।
পূর্ববর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০ লাখের বেশি অভিবাসী কর্মী নিজ দেশে ফিরে আসায় মালয়েশিয়ায় শ্রম ঘাটতি দেখা দেয়।