বাড়ছে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করলেন চিকিৎসকরা
রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে চোখের অতি ছোঁয়াচে রোগ কনজাংকটিভাইটিস, যা চোখ ওঠা হিসেবেও পরিচিত। হঠাৎ এ রোগ বাড়ায় চোখের চিকিৎসায় পরিচিত দুয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতে। তবে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সচেতন হতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
চোখ ওঠায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করলে পরবর্তীতে 'অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স' হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালগুলোতে জুলাই মাস থেকে কনজাংকটিভাইটিস রোগী বাড়তে শুরু করে। তবে সেপ্টেম্বরে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। চক্ষু হাসপাতালগুলোর আউটডোরের অধিকাংশ রোগীই এখন কনজাংটিভাইটিসের।
এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জের একটি চক্ষু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এ রোগে আক্রান্তের ৭ দিনের মধ্যে যাত্রীদের বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
আইড্রপের সংকট
হঠাৎ কনজাংকটিভাইটিস বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ সারা দেশে চোখের ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে 'অপটিমক্স আইড্রপ'-এর সংকট বেশি বলে জানিয়েছে ওষুধের দোকানদারেরা।
রাজধানীর শাহবাগের কাজী ফার্মেসির মালিক রাজীব আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোম্পানি অপটিমক্স আইড্রপ চাহিদামত সরবরাহ করতে পারছেনা। আমার দোকানে প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগী এ ড্রপের জন্য আসছে।"
একই কথা বলেন, রামপুরার লাইফ ফার্মেসির বিক্রেতা মোহাম্মদ রফিক।
"হঠাৎ চোখ ওঠা বেড়ে যাওয়ায় ১৪০ টাকা দামের অপটিমক্স আইড্রপের চাহিদা অনেক বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ কম", বলেন রফিক।
চিকিৎসকেরা জানান, ভাইরাসজনিত রোগ কনজাংকটিভাইটিসে ওষুধের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। এমনিতেই তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে এ রোগ সেরে যায়। এছাড়া এ রোগের জন্য হাই ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করাই ভালো।
অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহারে বাড়ে ক্ষতি
ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ইউভাইটিস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং হেড অফ রেটিনা ডা. মমিনুল ইসলাম বলেন, "চোখ ওঠা রোগ বেড়ে যাওয়ায় সবাই এখন বেস্ট অ্যান্টিবায়োটিক খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভাইরাসজনিত রোগ কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই এমনিতে ঠিক হয়ে যায়। কিছু কিছু সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য বা রোগীর সন্তুষ্টির জন্য একটা ড্রপ দেয় ডাক্তারেরা। এজন্য নরমাল ২০ থেকে ২৫ টাকার ড্রপ দিলেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এখন রোগীরা ফার্মেসির দোকানদারের পরামর্শে ১০০-১৫০ টাকা দামের হাই ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে, পরে সেখান রেজিস্ট্যান্স হয়। অর্থাৎ পরে চোখের ক্যাটারাক্ট অপারেশন বা আলসার হলে এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর কাজ করেনা।"
ডা. মমিনুল ইসলাম বলেন, "বিভিন্ন কোম্পানির ড্রপ আছে। একটি না পেলে অন্য বিকল্প পাওয়া যাবে। তবে কনজাংটিভাইটিসের জন্য লাইট গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চোখে কোন ওষুধ দেওয়া যাবেনা।"
"অনেক সময় ফার্মেসির দোকানদারেরা স্টেরয়েড জাতীয় কিছু ড্রপ দেয়, যা ম্যাজিক্যাল কাজ করে। কিন্তু এর ফলে চোখের ওপর প্রেশার বেড়ে যায়, চোখের জটিল রোগ হয় পরবর্তীতে," বলেন তিনি।
এ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে যার চোখ উঠেছে তার ও তার আশেপাশের মানুষকে সচেতন হতে হবে বলে জানান ডা. মমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "চোখ দিয়ে যে পানি বের হয় তা পরিষ্কার টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে, চোখে হাত দেওয়ার পর হাত স্যানিটাইজ না করে কারো গায়ে হাত দেপয়া যাবেনা, অন্যের টাওয়েল ব্যবহার করা যাবেনা, বাসার অন্যান্য সদস্য ও সহকর্মী আইসোলেট করে রাখতে হবে। ধুলাবালিতে গেলে সানগ্লাস পরে থাকতে হবে।"
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিশেষজ্ঞ ডা. আতিকুল হক বলেন, "বর্তমানে যে চোখ ওঠা রোগ হচ্ছে সেটাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোন ভূমিকা নেই, কারণ ভাইরাসজনিত এ রোগ এমনিতে ঠিক হয়ে যায়।"
তারপরও অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ অনেকগুলো বাজারে আছে। মক্সিফ্লক্সাসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকের বেশি ব্যবহার হয় বলে এখন এর সংকট দেখা দিচ্ছে। করোনার সময় ডক্সিসাইক্লিন যেমন বেশি ব্যবহৃত হয়েছে তেমন"
"এটি আসলে এক ধরনের হুজুগ। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, এ রোগ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে," বলেন তিনি।