জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বর্ধিত তহবিল চায় ঢাকা: জাতিসংঘে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি সাবা কোরোসির সঙ্গে বৈঠকের সময় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা অর্থাৎ, এর প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য বর্ধিত তহবিলের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাদের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মোমেন বলেন, প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তবায়িত হওয়া উচিত।
এ সময় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি এ বিষয়ে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা এবং রোহিঙ্গা শিশুদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফেরত যায়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জবাবে সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের ভূমিকার উচ্চ প্রশংসা করেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের তথ্যমতে, এ সংকট কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন সাধারণ পরিষদ সভাপতি।
সাবা কোরেসি সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অসাধারণ নেতৃত্ব, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কোভিড মোকাবেলাসহ বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সাধারণ পরিষদের সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে মোমেন দুটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
এগুলো হলো- 'এসডিজি বাস্তবায়ন রিভিউ' বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্ট আয়োজন এবং 'সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন এর আওতাধীন উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থ, পররাষ্ট্র ও উন্নয়ন মন্ত্রীদের সমন্বয়ে একটি ফোরাম প্রতিষ্ঠা'।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তহবিল ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টটির আয়োজন করা হলে তা এসডিজি'র বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং তহবিল ঘাটতি মোকাবেলায় ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া, সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন (এসএসসি) এর আওতায় মন্ত্রী পর্যায়ের উক্ত ফোরাম এসএসসি'র বিষয়ভিত্তিক আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিতে একটি চমৎকার প্লাটফর্ম তৈরি করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাধারণ পরিষদের সভাপতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব দুটিকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কোভিড-এর মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এছাড়া, তিনি কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
সেইসঙ্গে, সুবিধাজনক যে কোনো সময়ে সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া এর সঙ্গে বৈঠককালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের পিস অপারেশনে সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স (কিউআরএফ), বেজ্ ডিফেন্স কন্টিনজেন্ট, পদাতিক কন্টিনজেন্ট এবং পুলিশ কন্টিনজেন্ট পদায়নের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান আব্দুল মোমেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা; বিশেষ করে ফোর্স কমান্ডার নিয়োগের জন্যও আহ্বান জানান এবং নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা পুর্নব্যক্ত করেন।
সংঘাতপূর্ণ দেশসমূহে টেকসই শান্তি বিনির্মাণে বাংলাদেশের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও উত্তম অনুশীলন কাজে লাগানোর অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন-এর ২৬তম বার্ষিক কনফারেন্স-এ অংশগ্রহণের জন্য আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়াকে আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্বশীলতা ও পেশাগত দক্ষতার ভূয়সী প্রসংশা করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ হতে সুদানের আবেইতে পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রেরণ, মালিতে আমর্ড্ হেলিকপ্টার এবং কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স কন্টিনজেন্ট মোতায়েন, মধ্য আফ্রিকায় হাতপাতাল ইউনিট প্রেরণ এবং কঙ্গোতে এক্সপ্লোসিভ অর্ডিনেন্স ডিস্পোজাল (ইওডি) কন্টিনজেন্ট মোতায়েনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ভবিষ্যতে আরও নারী শান্তিরক্ষী মোতায়েনসহ জাতিসংঘের সার্বিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে অবদান রেখে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া।