ছুটির দিনে সাতক্ষীরার ভূমি অফিস থাকে দালালের হাতে, নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে দালালের হাতে থাকে সাতক্ষীরার তালা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। আজ (৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দেখা যায়, ভূমি অফিসের ভিতরে কাজ করছেন দালাল আলতাফ হোসেন। গণমাধ্যমকর্মী দেখেই অফিসের ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে দেন তিনি। বাইরে থেকে বার বার পরিচয় জানতে চাইলেও চুপ থাকেন আলতাফ।
ছুটির দিনে সরকারি অফিসে দালালের কার্যক্রমের বিষয়টি তাৎক্ষণিক অবহিত করা হয় তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস ও থানা অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফখরুল আলম খানকে। ইউএনও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোন ব্যবস্থা নেননি তিনি।
থানার ওসি বলেন, "যেহেতু অফিসটি ইউএনও'র আন্ডারে সেকারণে তিনি ব্যবস্থা নিবেন। এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।"
গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তালাবদ্ধ অফিসের ভিতরে থাকা দালাল আলতাফ হোসেন মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন অফিসের নায়েব আনিসুর রহমানসহ বাকি দালালদের সঙ্গে। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে অফিসের অপর দালাল হাবিবুর রহমান, গোলজার সরদারকে সঙ্গে নিয়ে অফিস চত্বরে আসেন ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান।
সরকারি ছুটির দিনে দালাল দিয়ে অফিসের কার্যক্রম করানোর বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ভূমি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, "আলতাফ আমার আত্নীয়।"
সরকারি অফিসের চাবি তার কাছে কেন এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই তার কাছে। এই জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেই আলতাফকে নিয়ে অফিস ত্যাগ করেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়নের এই ভূমি অফিসটিতে কেউ গেলে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। নামজারি, খাজনা দাখিলের জন্য ১০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। ঘুষ উত্তোলনে রেখেছেন আব্দুল গফুর, হাবিবুর রহমান, আলতাফ হোসেন, অফিসের পিওন শরিফুল ইসলাম।
ভুক্তভোগীরা ঘুষ গ্রহণ ও সাধারণ মানুষদের হয়রানির বিষয়টি তালা ইউএনও প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস, এসিল্যান্ড রুহুল কুদ্দুসকে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেননি তারা।
এদিকে, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে খাজনা দাখিলার জালিয়াতি কাগজ তৈরি করে তালা ইসলামকাটি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করার চেষ্টা করা হয় গত ২৮ সেপ্টেম্বর। ঘটনাটি ধরা পড়ায় দলিল লেখককে বরখাস্ত করেছেন সাব রেজিষ্ট্রার মো.মইনুল হক।
তালা ইসলামকাটি সাব রেজিষ্ট্রার মো.মইনুল হক জানান, "জালিয়াতি সন্দেহ হওয়ায় জমির কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসিল্যান্ডের নিকট তঞ্চকতার বিষয়টি নিশ্চিত হতে লিখিতভাবে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ছুটির দিনে অফিসে দালালের উপস্থিতির বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, "রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস। এর বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া অফিসে কেউ থাকার কথা নয়। দালাল অফিসের কাজ করছে এটা জেনেছি। এটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, "গুরুত্বের সঙ্গে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে নায়েবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"