বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে 'জালিয়াতির' অভিযোগ এনে মামলার আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলার আবেদন করেন।
তার এজহারের কপি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। তবে ওসি না থাকায় মামলাটি এখনও নথিভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে।
মামলার আবেদনে মুজাহিদুল ইসলাম সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ে 'জালিয়াতির' অভিযোগ এনেছেন।
তিনি বলেছেন, "বিচারপতি খায়রুল হক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় প্রভাবিত হয়ে এবং তার অবসরপরবর্তী ভালো পদায়নের লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিমূলকভাবে শেখ হাসিনাকে খুশি করার অভিপ্রায়ে ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশটি পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উক্ত আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।"
বিচারক হিসেবে দুর্নীতিমূলক ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরীর জন্য দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় এ মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছিল। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছিল।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০১ সালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন। সেই মামলার শুনানি করে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
রিট আবেদনকারী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু ওই বছর সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সময় 'জালিয়াতি' করা হয় বলে শাহবাগ থানার মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "বিচারক হিসেবে দুর্নীতিমূলক' ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরির জন্য দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।"
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়।