আরো বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে ব্রুনাই, সুলতানের সফরকালীন এমওইউ স্বাক্ষরের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য ব্রুনাইয়ের সঙ্গে একটিসহ বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ব্রুনাই সুলতানের প্রথম সফরের সময় এসব চুক্তি ও এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট এবং সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত নাবিকদের সার্টিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
সুলতানের সফরের সময় ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি, বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকরা ব্রুনাইয়ে কাজ করছেন।
মোমেন বলেন, "ব্রুনাই একটি ছোট দেশ; এখানে প্রায় সাড়ে চার লাখ লোক আছে, কিন্তু দেশটি খুবই ধনী। সেখানে কাজ করা বাংলাদেশিরা খুব ভালো রয়েছেন, তাদের কোনো অভিযোগ নেই।"
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস) এর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ব্রুনাইতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তথ্য অনুসারে, ব্রুনাই ১৯৯২ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির আগে ব্রুনাইয়ে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মরত ছিলেন। তবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৯৫০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ব্রুনাই।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-এর সেক্রেটারি জেনারেল শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান টিবিএসকে বলেন, "ব্রুনাই বাংলাদেশিদের জন্য পুরানো শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে দেশটি। মধ্য-প্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো ব্রুনাইয়ের বাজার অতটা বড় না হলেও বাংলাদেশের কাছে এর গুরুত্ব রয়েছে। কারণ সিঙ্গাপুরে সাধারণত একজন শ্রমিক যা উপার্জন করেন, ব্রুনাইয়ের একজন কর্মীও ঠিক তেমনই উপার্জন করতে পারেন।"
একজন বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক সেখানে প্রতি মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ ব্রুনাই ডলার উপার্জন করতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনবল নিয়োগের বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষর, বেসরকারি নিয়োগের পাশাপাশি সরকারিভাবে (জিটুজি) নিয়োগেরও সুযোগ তৈরি করবে।
সরাসরি ফ্লাইট অপারেশন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরাসরি ফ্লাইট দুই দেশের মধ্যে পর্যটন ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে।
তিনি বলেন, "জ্বালানি আমদানির বিষয়ে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় অগ্রগতিও হয়েছে এবং তারা (ব্রুনাই) এ বিষয়ে আগ্রহী। সুলতানের সফরের সময়েও বিষয়টি তুলে ধরা হবে।"
ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের হালাল পণ্যের (ইসলামে অনুমোদিত) বিষয়ে আগ্রহী উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমাদের দেশে প্রচুর মহিষ, গরু এবং ছাগল রয়েছে। সুলতান আমাদের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী।"
"ব্রুনাই মূলত বিদেশ থেকেই সবকিছু আমদানি করে। তারা এখন খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জোর দিচ্ছে। আমরা এক্ষেত্রে মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছি। আমরা ধান ও মাছ উৎপাদনে এগিয়ে আছি। ব্রুনাই আমাদের সঙ্গে কৃষি ও মৎস্য চাষে সহযোগিতা করতেও আগ্রহ দেখিয়েছে। চিংড়ি ও মাছ চাষে আমাদের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা সেটিই চায়," যোগ করেন মোমেন।
মন্ত্রী বলেন, এই সফর রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী ও সুলতানের মধ্যে বড় পরিসরে মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করবে।
গত এক দশকে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, কৃষি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, শক্তি সম্পদে সমৃদ্ধ উচ্চ আয়ের দেশ ব্রুনাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে।
কৃষিতে দেশের আয় বাড়ানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদনের জন্য জমি লিজ নিয়ে সরকার দেশের কৃষকদের বিদেশে পাঠাতে চায়।
এ বিষয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, "এটি আমাদের আয়ও বাড়াবে এবং দেশের মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।"
ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জদ্দীন ওয়াদ্দৌলাহ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী ১৫ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন।