দালালদের দৌরাত্ম্যে জন্মনিবন্ধন করতে ভোগান্তি
জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে লোকজনের ভোগান্তি, অসন্তোষ, ক্ষোভের কথা জানালেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস পালন উপলক্ষে রোববার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ কথা বলেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, "দিনের বেলা জন্মনিবন্ধনের সার্ভার ডাউন থাকে। কখনো বন্ধও থাকে। আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে ওই সময় লোকজন এসে নিবন্ধন করতে পারেন না। রাতে সার্ভার ঠিক থাকে। ফলে লোকজন 'নিশাচর দালাল'দের হাতে জন্মনিবন্ধনের কাজটি দিয়ে দেন। হটলাইন নম্বর থাকলেও কেউ ফোন ধরেন না।"
উত্তরের মেয়র বলেন, আইন অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে সংশোধন হয়। কিন্তু ৯০ দিনের বেশি হয়ে গেলে জেলা প্রশাসক বা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের (ডিডিএলজি) কার্যালয়ে যেতে হয়। কাজটি সহজ করতে ই-নথির মাধ্যমে স্বাক্ষর এবং কিউআর কোড-সংবলিত জন্মনিবন্ধন চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।
জন্মনিবন্ধনের কাজ সহজ করতে ঢাকার ৫৪টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়কে সংশোধনের দায়িত্ব দিতে আইন সংশোধন করতে বলেন মেয়র আতিক।
দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, "জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ ও ক্ষোভের রোষানলে পড়ি আমরা। কারণ তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কিন্তু প্রক্রিয়া, আইন ও বিধিগত কিছু বিষয় থাকে, যেগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। বিদেশ থেকে বড় বড় ই-মেইল পাই। সমাধান দিতে পারি না। বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।"
দক্ষিণের মেয়র আরও বলেন, নিজের কাজটি আগে করার আকাঙ্ক্ষা থাকে সাধারণ মানুষের। তা থেকে দুর্নীতির উৎসও তৈরি হচ্ছে। মেয়র বলেন, "বছরে যতটি জন্মনিবন্ধন সার্ভারের সক্ষমতা, অন্তত চার গুণ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে চার–পাঁচ বছর জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজটি অনায়াসে করা যায়।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের উদ্দেশে তারা বলেন, "স্কুলে ভর্তির মৌসুমে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস জন্মনিবন্ধনের প্রচণ্ড চাপ শুরু হবে। তার আগেই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। লোকজন বাধ্য হয়ে দালাল চক্রের হাতে জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব তুলে দেয়।"
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, "মন্ত্রী হিসেবে আমার টাকা দেওয়ার নিজস্ব ক্ষমতা আছে। সার্ভারের জন্য টাকা চাইলে কেন দিতে পারব না? বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। আর সার্ভারের জন্য পাঁচ-সাত কোটি টাকা দেওয়া যায় না! এই টাকা কোনো বড় ব্যাপার না। লোকজন তাদের কাজ ফেলে দিনের পর দিন জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘোরেন।"
মন্ত্রী আরও বলেন, "বহু মাত্রায় দুর্ভোগ হচ্ছে। রাষ্ট্রদূতেরা ভোগান্তির বিষয়ে আমাকেও জানিয়েছেন। আইন এত জটিল করার দরকার নেই। তবে কেউ যেন অপব্যবহার না করে, সেটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।"
স্বাগত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান বলেন, "জনসংখ্যার চেয়ে জন্মনিবন্ধন কেন বেশি, এ নিয়ে প্রায়ই লোকজন প্রশ্ন করেন। জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি।
গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে দূতাবাসের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন হয়েছে প্রায় ২২ কোটি। জনশুমারির মাধ্যমে প্রাপ্ত সংখ্যা হচ্ছে জীবিত জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা একটি ক্রমসঞ্চিত সংখ্যা। এছাড়া মৃত্যুনিবন্ধনের সংখ্যা এই ক্রমসঞ্চিত সংখ্যা থেকে বাদ দেওয়া হয় না। একাধিক নিবন্ধন, দ্বৈত এন্ট্রি ইত্যাদি কারণেও কিছু ডুপ্লিকেট (ভুয়া) ডেটা রয়েছে।"
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ সারা ফারুক আবদুল্লাহ। তারা জন্মনিবন্ধন নিয়ে আরও সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এখন ৫৬ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন হয়েছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
৬ অক্টোবর ছিল জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস। এ উপলক্ষে আজ আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ সময় রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমস্যাগুলো টুকে রাখতে বলেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিয়ে অনন্য কাজ করায় ৪০টি জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে পুরস্কৃত করা হয়।
শ্রেষ্ঠ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে রাজশাহী বিভাগ, যশোর জেলা, যশোরের কেশবপুর উপজেলা, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নওগাঁ পৌরসভা, সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোল ইউনিয়ন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, দুবাই।