কথিত বন্দুকযুদ্ধে যুবদল নেতার মৃত্যুর ৫ বছর পর চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
নোয়াখালীতে পাঁচ বছর আগে 'বন্দুকযুদ্ধে' স্থানীয় যুবদল নেতা নিহতের ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার জন্য জেলা আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার আলিয়ারপুর ইউনিয়ন যুবদলের তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক হুদা মোহাম্মদ আলম ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
রোববার দুপুরে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদনটি জমা দেন নিহতের স্ত্রী খুরশিদা বেগম পুষ্প।
পুলিশি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ সালের ১৫ (২) (৩) ধারায় দায়ের করা এ মামলায় পুলিশ সুপার ছাড়াও আসামি করা হয়েছে তৎকালিন বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান শেখ, বেগমগঞ্জ থানার ওসি মো. সাজেদুর রহমান সাজিদ ও এসআই জসিম উদ্দিনকে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগকারীর মামলার আবেদনটি আদালত গ্রহণ করলেও তা এখনও আমলে নেওয়া হয়নি। একইসাথে আদালতে আবেদনকারির বক্তব্যও গ্রহণ করেছেন জেলা ও দায়রা জজ নিলুফার সুলতানা। তবে আদালত এখনও কোন আদেশ দেন নি।
বাদীপক্ষে আদালতে মামলার আবেদন করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মাহফুজুর রহমান ইলিয়াস ও এডভোকেট সাইফুর রহমান প্রামানিক।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মাহফুজুর রহমান ইলিয়াস টিবিএসকে বলেন, "যুবদল নেতা হুদা মোহাম্মদ আলম নিজ দলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে একটি কুচক্রিমহল পুলিশের এ চার কর্মকর্তার সাথে যোগসাজস করে তাকে হত্যা করে। কিন্তু পুলিশের এ কর্মকর্তারা হত্যার পরেও দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালীতে কর্মরত থাকার কারণে নিহত হুদার পরিবার আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস করেনি।"
"পুলিশের ওই কর্মকর্তারা বদলি হয়ে যাওয়ায় স্বামী হত্যার ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় খুরশিদা বেগম আদালতে মামলার আবেদন করেছেন," জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, নিহত মো. আলম বেগমগঞ্জের ধীতপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। আলাইয়াপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু হয়। সেসময় পুলিশ দাবি করেছিল গুলি চালাচালির ঘটনায় কর্মরত পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
সেসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি পাইপগান, তিনটি ছোরা, পাঁচটি রড ও গ্রিল কাটার যন্ত্র জব্দ করা হয়েছিল। আলমের বিরুদ্ধে থানায় ১০টি ডাকাতি মামলাও ছিলো বলে জানায় পুলিশ। এমনকি তিনি তখনকার চন্দ্রগঞ্জের সন্ত্রাসী জিসান বাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে জানানো হয়।
ঘটনার পর পুলিশ বলে, ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একাধিক মামলার আসামি 'ডাকাত আলমকে' গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে অস্ত্র উদ্ধারে দাসপাড়া গ্রামের দাসেগো বাগানে অভিযান চালানো হয়।
ওই স্থানে পৌঁছানোর পর আলমের সহযোগিরা পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এসময় পুলিশের হেফাজত থেকে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ডাকাত আলম। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলমকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবার অভিযোগ ছিলো, ওই বছরের ২২ আগস্ট সকালে সাদা পোশাকের পুলিশ আলমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরদিন বুধবার রাতে তাকে কথিত বন্দুক যুদ্ধে হত্যা করে।