মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে মরিয়মের ভাইয়ের জবানবন্দি
খুলনার মহেশ্বরপাশা থেকে আত্মগোপনে গিয়ে রহিমা বেগম নিজেই অপহরণের নাটক সাজান- এমনটাই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন রহিমার ছেলে ও আলোচিত মরিয়ম মান্নানের ভাই মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদী।
আজ সোমবার বিকেলে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সরোয়ার আহম্মেদের আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, 'বেলা ১২টার দিকে পিবিআই কার্যালয়ে এসে মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদী মায়ের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেয়ার আগ্রহ জানান। পরে পুলিশ তাকে আদালতে নিয়ে যায়।'
তিনি বলেন, 'মায়ের বিচার চেয়ে তিনি আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'রহিমা বেগম বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। এটা তার ইগোতে লগেছে। এজন্য তিনি স্বেচ্ছায় মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।'
এদিকে রহিমা বেগম দুদিন আগে আবারও কাউকে না জানিয়ে মেয়েদের বাড়ি ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান সোমবার বিকেলে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, 'আমার ভাই শাদী আমাকে জানিয়েছিল মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আদুরীর কাছে ফোন করে জানতে পারি মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেছে, কেউ জানি না। এবার আর মাকে খুঁজব না।'
মরিয়ম মান্নান বলেন, 'ফরিদপুর থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে আদালত থেকে মাকে আদুরীর জিম্মায় দেওয়া হয়। তখন সব ভাই-বোনদের সিদ্ধান্তে মাকে ও আদুরীকে নিয়ে আমি ঢাকাতে আসি।'
তিনি বলেন, 'মা আদালতে দাবি করেছিল, তাকে অপহরণের সময়ে মারধর করা হয়েছিল। তাই ঢাকাতে নিয়ে তাকে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই। তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন তার গায়ে কোন স্পট নেই। পরে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। তারা জানিয়েছেন কোন সমস্যা নাই। তিনি কান্নাকাটি করতেন, বিশৃঙ্খলা করতেন, আমাদের সাথে থাকতে চাইতেন না।'
পরে গত ১ অক্টোবর আদুরী ও রহিমা বেগমকে খুলনায় পাঠানো হয়। আজ আদুরী জানিয়েছে তাদের মা দুই বা একদিন আগে নিখোঁজ হয়েছেন। কখন নিখোঁজ হয়েছে, সঠিক সময় জানতে পারেননি তারা।
'আমার ১৩ বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। মা আমাদের মানুষ করেছেন। আমরা একটি সুন্দর মাকে চিনতাম। কিন্তু এখন চিনছি না। মায়ের বদনাম করতে পারছি না, তাই আর কিছু মিডিয়াকে বলব না।'
তার ভাইয়ের আদালতে মায়ের বিরুদ্ধে জবানবন্দী দেওয়া প্রসঙ্গে মরিয়ম বলেন, 'আমি বিষয়টি শুনেছি। যদি আদালত থেকে আমাকেও বলা হয়, আমি সব সত্য বলব। আইন আদালতের ওপর আমাদের আস্থা আছে।'
এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, 'আদালত রহিমাকে আমাদের জিম্মায় দেয়নি। তাই তিনি কোথায় আছেন, সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। আদালত তাকে তার মেয়ে আদুরীর জিম্মায় দিয়েছিল। তাই তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।'
আদুরী আক্তারের কাছে তার মায়ের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। আদুরী প্রশ্ন করে বলেন, 'এসব আপনাদের কেন বলব?'
রহিমার ছেলে মিরাজ বলেন, 'মা বোনদের কাছে আছে, নাকি অন্য কোথাও আছে জানি না। সে যদি কোথাও চলে যায় তো যাক। সে মারা গেলেও আমি তাকে খুঁজব না।'
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের একটি দল রাত ২টার দিকে রহিমা বেগমকে নিয়ে খুলনার দৌলতপুর থানায় পৌঁছায়।
পুলিশ জানায়, রহিমা বেগমের খুলনার বাড়িতে বেশ কয়েক বছর আগে কুদ্দুস মোল্লা নামের এক ব্যক্তি ভাড়া থাকতেন। তার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুরে। ওই বাড়িতেই রহিমা বেগম আত্মগোপনে ছিলেন।
এর একদিন আগেই ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার করা একটি মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম মান্নানসহ রহিমা বেগমের তিন মেয়ে।
গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। রাত সোয়া ২টার দিকে দৌলতপুর থানায় অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী।
সে জিডি থেকে জানা যায়, নিখোঁজের সময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার বাড়িতে ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা। দীর্ঘ সময় পরও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মাকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ২৮ আগস্ট দৌলতপুর থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী।
রহিমা অপহৃত হয়েছেন দাবি করে ১ সেপ্টেম্বর খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্যরা।
রহিমার সঙ্গে জমি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মামলা চলছে বলেও সে সময় জানানো হয়েছিল। রহিমার করা সেই মামলায় আসামিরা হলেন প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিুকল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফ।
আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর রহিমা অপহরণ মামলা পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।