২৬ মার্চ দেশে ফিরতে চান আওয়ামী লীগের নেতারা: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া বেশ কয়েকজন নেতা সরকার পরিচালনা ও রাজনীতিতে তাদের 'কিছু কিছু ভুলত্রুটি' স্বীকার করে এখন আবারও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের আশা করছেন।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের এমপি-মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। তবে প্রতিবেদনটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে হওয়া গুম, খুন, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সম্পর্কে তাদের কোনো প্রশ্ন উল্লেখ করেনি ভারতের গণমাধ্যমটি। এমনকি জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন ছিল না।
এর আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। প্রতিবেদনে উল্লিখিত আসাদুজ্জামানের প্রতিটি কথাই মিথ্যা বলে জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক পেইজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রকাশিত গণহত্যার পলাতক আসামি আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকার মিথ্যাচার এবং ভুল তথ্যে পরিপূর্ণ।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারের সংক্ষেপিত অংশ তুলে ধরা হলো-
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজমেল হক (৭৮) দাবি করেন, 'আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মীকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তারা আত্মগোপনে আছে। তাদের কাছে টাকা-পয়সাও নেই, খাবারের জন্য তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটছে। তবুও তাদের মনোবল দৃঢ় রয়েছে। আমরা দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো করার জন্য ভারতের কাছে আশা রাখি।'
তিনি বলেন, প্রবীণ নেতারা ভাবছেন '২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের সবাইকে দেশে ফিরে যাওয়া উচিত'।
৪৪ বছর বয়সি সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় সব জামিন আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই 'শোচনীয়'।
তার দাবি, 'এ পর্যন্ত আমাদের কোনো বিচারিক অধিকার নেই, কোনো জামিন মঞ্জুর করা হচ্ছে না এবং আমরা এও জানি যে যদি আমরা ফিরে গিয়ে নির্বাচনের দাবি করি, তাহলে আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং কারাগারে রাখা হবে... আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত। তবে বর্তমানে এর কোনো পরিবেশ নেই। এ মুহূর্তে আমাদের পক্ষে (রাজনীতির) মাঠে থাকা মাটিতে থাকা এবং রাজনীতিতে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।'
দলের অন্যান্য নেতার মতো রাজ্জাকও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দলকে শক্তিশালী ও উজ্জীবিত করার জন্য 'ব্যাপক আলোচনা' চলছে।
অনেক নেতাই জানিয়েছেন, একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাদের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ গ্রুপে ৩০-৪০ জন সাবেক এমপি ও মন্ত্রী রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ কীভাবে কাজ করছে সে বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাবেক এমপি ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, 'আমি টেকনিক্যালি আত্মগোপনে থাকা অবস্থাতেও প্রতিদিন দলের কর্মীদের কাছ থেকে ২০০-৩০০ কল পাই। এভাবে নেতারা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন, আর কর্মীরা জনগণের সঙ্গে। একবার আইনের শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, আমরা আইনের মুখোমুখি দাঁড়াতে প্রস্তুত।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে 'আপা' নামে রয়েছেন হাসিনা
বেশ কয়েকজন নেতা দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত দলীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।
সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) বহু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে 'আপা' হিসেবে রয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে থাকা নেতাদের সাথে হাসিনা ঘন ঘন যোগাযোগ করছেন। আমিও তার সাথে যোগাযোগ করছি ... তিনি অনেক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রয়েছেন। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো তিনি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই আশাবাদী।
আরেক সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজামান শিখর বলেছেন, আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূল কর্মী এ কারণে আত্মবিশ্বাসী যে তারা শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন।
'সব হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা অন্যায়'
মোজাম্মেল হকের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিষয়গুলো 'ভুলভাবে' প্রচার করা হচ্ছে।
তার ভাষ্যমতে, '২০২৪ সালের আগস্টে থানা থেকে লুট হওয়া ছোট ছোট অস্ত্র উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা সন্দেহ করছি আরও অস্ত্র সমুদ্র রুট দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। পাকিস্তান যেমন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে, তেমনি বাংলাদেশকেও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।'
টেলিফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা হয় সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের। তার ধারণা এখনও দলের তিন লাখেরও বেশি কর্মী বাংলাদেশে এবং অনেক নেতা বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন।
তিনি বলেন, 'সব বিশৃঙ্খলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করা ঠিক নয়।'