মানুষের জীবনযাত্রা উন্নয়নে সাহায্য করবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের মানুষের উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে অবদান রাখবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার করোনাভাইরাস মহামারি থেকে যেভাবে সামলে উঠেছে, সেভাবে বর্তমান জ্বালানি সংকটও কাটিয়ে উঠবে। বুধবার (১৯ অক্টোবর) পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি (রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল) স্থাপন উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। পাবনার উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, "আমাদের লক্ষ্য ছিল সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, যা আমরা অর্জন করেছি এবং সমগ্র দেশকে আলোকিত করতে সক্ষম হয়েছি।"
"কিন্তু বিশ্ব জ্বালানি সংকটের কারণে উন্নত দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।"
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক পাওয়ার প্ল্যান্ট দুর্ঘটনা, চেরনোবিল বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সামগ্রিক নিরাপত্তার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলাম। নিরাপত্তাই ছিল আমাদের প্রধান উদ্বেগ। একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।"
গত বছরের অক্টোবরে, প্রধানমন্ত্রী প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটে চুল্লি স্থাপনের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের ৩৩তম দেশ হিসেবে পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনের খাতায় নাম লেখায় বাংলাদেশ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাশিয়ার আণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ।
স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পারমাণবিক প্রযুক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খুব কাছাকাছি রয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর, এই প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়লেও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চলতে থাকে।
প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট একই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। জনশক্তি প্রশিক্ষণসহ প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করছে রাশিয়া।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরুর তারিখ থেকে পরবর্তী ন্যূনতম ৬০ বছর পর্যন্ত প্ল্যান্টটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে সাধারণত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আর্থিক জীবনকাল ২৫ বছর।
দীর্ঘস্থায়ী পরিষেবার পাশাপাশি, প্ল্যান্টটি পরিবেশে ক্ষতিকারক কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত না করেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করবে।
ইয়াফেস ওসমান বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটের ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ হবে।
"এখন পর্যন্ত, প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী চলছে এবং আমরা সময়সীমার মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী," যোগ করেন তিনি।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, "আমরা সময়সীমার মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমার দিকের প্রস্তুতি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, বরং যারা বিদ্যুৎ কিনবেন তাদেরকেও সঞ্চালন লাইন নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।"
তবে এই প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরানোর জন্য সঞ্চালন লাইনের কিছু অংশের কাজ এখনও শুরু হয়নি বলে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শওকত আকবর বলেন, প্রকল্পের প্রায় ৫৩ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি এবং ৫৫ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। অন্যদিকে, প্রথম ইউনিটের সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।
"এখন আমরা প্রথম ইউনিটের কাজ শুরু করার পর্যায়ে আছি। এটি আমরা আগামী বছরের অক্টোবরে শুরু করবো বলে আশা করছি," যোগ করেন শওকত আকবর।
তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া, বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর দুই বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। এসময় প্ল্যান্টটি বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করতে শুরু করবে।
১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ ২০ বছরে পরিশোধ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার বিদেশিসহ প্রায় ৩৩ হাজার লোক প্ল্যান্ট সাইটটিতে কাজ করছেন।