বাজারে মিলছেনা প্যাকেটজাত চিনি, উৎপাদনকারীরা বলছেন গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত
বাজারে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। খোলা চিনি বেশি দামে কেনা গেলেও প্যাকেট চিনি পাওয়াই যাচ্ছে না।
রাজধানীর মগবাজার, কৃষি মার্কেট, বাড্ডা, কারওয়ান বাজার এলাকার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার মিজান স্টোরের বিক্রেতা মোহাম্মদ মিজান বলেন, "তিন থেকে চার দিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা প্যাকেট চিনি সরবরাহ করছেন না। তাই প্যাকেট চিনি নেই। এ দোকানে খোলা চিনি ১১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।"
গত ৬ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকায় বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু শনিবার ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় খোলা চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন কমে গেছে অর্ধেকের কম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বেশিরভাগ দোকানে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজিতে। তবে এ সময় অনেক দোকানে প্যাকেটজাত চিনির দেখাই মেলেনি।
মোহাম্মদপুর পাইকারি কৃষি মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, মিলগেটে ১২ থেকে ১৪ দিন ধরে ট্রাকের যানজট লেগে থাকছে। এজন্য তারা প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে মাশুল গোনেন। দিনশেষে যা ভোক্তাকেই বহন করতে হচ্ছে।
মেঘনা গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ তসলিম শাহরিয়ার টিবিএসকে বলেন, "গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের চিনি উৎপাদন কমে গেছে। যেখানে প্রতিদিন চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টন চিনি মার্কেটে যেত আমাদের, সেখানে এখন যাচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টন।
মোঃ তসলিম শাহরিয়ার বলেন, "এখনও আমার ফ্যাক্টরিতে এক হাজার গাড়ি অপেক্ষায় আছে চিনি নেয়ার জন্য। গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে গেছে, আমাদের তো কিছু করার নেই। এক মাস আগেও চাহিদা অনুযায়ী চিনি উৎপাদন করতে পারতাম। এখন গ্যাসের সমস্যা ছাড়া আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমাদের প্রায় ৬ হাজার টন চিনি উৎপাদন সক্ষমতা। গ্যাস সংকটের কারণে আমরা সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছি না।"
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চিনির দাম কমছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত।"
তিনি বলেন, "আগস্টের শুরুতে পাইকারি দাম ছিল মণপ্রতি ২,৭৫০ টাকা থেকে ২,৮০০ টাকা [১ মণ প্রায় ৩৭ কেজির সমান]। কিন্তু এখন তা ৩,৫৫০ টাকা। বাজারের পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক।"
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, গেল অর্থবছরে (২০২১-২২) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ টন।
একসময় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টন চিনি উৎপাদন করত।
গত দুই বছরে ১৫টি সরকারি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি উৎপাদন বন্ধ রেখেছে, ফলে বার্ষিক উৎপাদন যথাক্রমে ৪৮ হাজার টন এবং ২৫ হাজার টনে নেমেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ চিনি উৎপাদন এখন অনেকটাই বেসরকারি মিলের ওপর নির্ভরশীল।