দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, নিহত ১১
ক্রমশ শান্ত হয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখন আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে বিপদ সংকত কমিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভোলার কাছে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে।
মধ্যরাতের দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সোমবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ৭৪ কিলোমিটার।
বেলা ২টা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে জয়নাল আবেদীন ভূইয়া (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টায় উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধ্বজনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জয়নালের স্ত্রী নিপা আক্তার আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলা ১টা: মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে ঘূর্ণিঝড়ে গাছ ভেঙ্গে বসতঘরের নিচে চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। একইসাথে গুরুতর আহত হয়েছে বাবা ও ছেলে।
সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার সকালে বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিহত মা আসমা বেগম আশু (২৮) ও মেয়ে সুরাইয়া (৩) এর মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
আহত অবস্থায় বাবা আব্দুর রাজ্জাককে (৩৫) ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ছেলে আরাফাতকে (১০) স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
২৫ অক্টোবর সকাল: ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল ও কক্সবাজারের মতো উপকূলীয় জেলায় আঘাত হানে ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস। অনেক জেলায় সংযোগ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখে পড়ে।
নিহতের মধ্যে তিনজন ছিলেন কুমিল্লার। এছাড়াও ভোলায় দুইজন এবং নড়াইল, নোয়াখালী ও খুলনা জেলায় একজন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রাত ১.৩০: সাইক্লোন সিত্রাং বর্তমানে সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। জাপানের ভূ-পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইট চিত্রের সূত্র দিয়ে একথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিশালী অংশটি বর্তমানে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে।
রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সাইক্লোনের শক্তিশালী অংশটি সিলেট বিভাগ অতিক্রম করবে। এরপর দ্বিতীয় শক্তিশালী অংশটি ময়মনসিংহ বিভাগ অতিক্রম করবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের আসাম, মেঘালয়, মনিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্যের দিকে যাবে সিত্রাং।
রাত ১২.১০: সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রবল বাতাসে টিনের চালা দেওয়া বাড়ির ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় মারা গেছেন একই পরিবারের তিন সদস্য।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল গ্রামে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী সাথী আক্তার এবং কন্যা লিজা আক্তার।
বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন হেসাখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল।
রাত ১১.৫০: বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আজ সন্ধ্যায় আঘাত হানার পর থেকেই সেখানে প্রবল বায়ুপ্রবাহ ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ উপকূলীয় এলাকায় ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। মধ্যরাতে ঝড়ের কেন্দ্র বরিশাল ও চট্টগ্রাম অতিক্রম করার আগে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাত ১১.৪০: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একের পর এক গাছ উপড়ে পড়ছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে আটটি গাছ উপড়ে পড়ার কথা জানা যায়।
সোমবার রাত ১১টায় কুমিল্লার হাইওয়ে পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ গাছ পড়ার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
এর ফলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়া সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।
রাত ১১টা: বর্তমানে ঢাকা, ময়মনসিংহ, ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বাতাস সবচেয়ে বেশি বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
ফলে, সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১০টার পর এ তিন বিভাগের সকল জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে সোমবার রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস প্রবাহিত হবে।
রাত ১০টা: টেলিকম সেবাকে প্রয়োজনীয় সেবা হিসেবে বিবেচনা করে জনস্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)।
'সিত্রাংয়ের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আমরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হচ্ছি। ব্যাটারি ও জেনারেটর ইত্যাদি ব্যবহার করে আমরা নেটওয়ার্ক সেবা অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি', সোমবার (২৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে অ্যামটব।
বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু হওয়া মাত্রই নেটওয়ার্ক সেবা পুনরায় পুরোপুরি চালু করতে অপারেটরগুলো সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে বলে অ্যামটবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
রাত ৯.৪০: খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ভোলার নিকটে, কিন্তু উপকূল থেকে দূরে অবস্থিত।
এটি বরিশাল ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী উপকূলে আগামী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে বলে জানান তিনি।
রাত ৯টা: পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বাহিনীটির সব ইউনিটকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে সৃষ্ট সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকল জোনের উপ-মহাপরিদর্শক, মেট্রপলিটন পুলিশ কমিশনার, বিশেষায়িত নৌ-পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও উপকূলীয় জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
এ সময় স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে মানুষকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
রাত ৮:৩০টা: খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, খুলনার উপকূল থেকে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা সরে গিয়ে ভোলার দিকে অগ্রসর হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খুলনায় বাতাসের গতিবেগ প্রায় কমে গিয়ে বর্তমানে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বেগে বইছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টিও একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
রাত ৮টা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রবল ঝোড়ো বাতাসে সোমবার সন্ধ্যায় কালনা-নড়াইল মহাসড়কে একটি শতবর্ষী গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে নরাইলের সাথে দেশের অন্যান্য অংশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রচণ্ড বাতাসের দাপটে শতবর্ষী বটগাছটি ভেঙে পড়ে। তবে ভাগ্যক্রমে সেসময় রাস্তা খালি থাকায়, কেউ হতাহত হয়নি।
সন্ধ্যা রাত ৭.২৫টা: খুলনার দাকোপ উপজেলার ঝুলন্ত পাড়ার নারী ও শিশুরা সুন্দরবনের কালাবগি ফরেস্ট স্টেশনের আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাতাসের গতি বাড়লে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যান।
কালাবগি স্টেশনের অফিসার জহিরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ৫০ জন নারী ও শিশু ট্রলারে করে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর তাদেরকে খাবার সরবরাহ করা হয়।
'বাতাসের গতিবেগ বাড়লেও পানির উচ্চতা বেশি না হওয়ায় গবাদিপশুর ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে ফসলের ক্ষতি হতে পারে,' বলেন জহিরুল।
কালাবগি'র ঝুলন্ত পাড়া সুরখালি ও শিবসা নদীর মোহনায় অবস্থিত। নদীর অপর পাড়ে সুন্দরবন। বারবার ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ও ভূমিধসের কারণে গ্রামটি এখন বিলুপ্তির পরিস্থিতিতে রয়েছে। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ জীবনধারণের জন্য সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।
সন্ধ্যা ৭টা: সাইক্লোন সিত্রাং মোকাবিলায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ)।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়। আজ মধ্যরাতের মধ্যেই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি কমানো, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক।
সন্ধ্যা ৬.৪৫টা: খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে এপর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও কোন প্রাণহানির খবর মেলেনি। তবে বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ছে।
দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য পাঁচ হাজার ২৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সজাগ অবস্থায় আছে বলেও জানান তিনি।
সন্ধ্যা ৬.৩০টা: দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে আজ বিকেল ৪টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম গণমাধ্যমকে জানান, 'নদীতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস বইছে। নদী উত্তাল হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে আবার ফেরি সার্ভিস চালু হবে'।
এর আগে সকাল ১১টা থেকেই এ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে বিআইডব্লিউটিসি।
এরমধ্যেই খুলনার বাগেরহাটের কয়েকটি উপজেলার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত জেলার মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার ২৯ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছেছে। এছাড়া, অতি-দূর্যোগপ্রবণ এলাকায় উপজেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে সহযোগিতা করছে।
বরিশালে প্রবল বাতাসে বেশ কিছু গাছ উপড়ে গেছে, বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলায়ও বহু বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও তার ছিঁড়ে যাওয়ায় দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের কারণে পিরোজপুর ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সিত্রাং দেশের ১৩টি জেলায় মারাত্মক এবং আরও দুটি জেলায় হালকা আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যার মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে এবং আগামীকাল ভোরে উপকূল অতিক্রম করতে পারে ।
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ১৩টি জেলা হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী।
ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং' আজ সন্ধ্যার মধ্যেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "ঘূর্ণিঝড় দেশের ১৩টি জেলায় আঘাত হানতে পারে; এছাড়াও দুটি জেলা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলের বিপজ্জনক এলাকাগুলো থেকে শতভাগ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।"
ইতিমধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত ও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল ভোর রাত বা সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে বরিশালে। সময়ের সাথে সাথে বাতাসের তীব্রতাও বাড়ছে। সঙ্গে হচ্ছে বৃষ্টিপাত।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস জানান, উপকূলের খুব কাছে চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঝড়টি বর্তমানে কুয়াকাটা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আজ সোমবার রাতে অথবা মঙ্গলবার সকালে এটি বরিশাল ও চট্টগ্রাম অতিক্রম করতে পারে। বাতাসের বর্তমান সর্বোচ্চ গতি প্রতিঘন্টায় ৮৮ কিলোমিটার।