৯২ শতাংশ সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু টানেলের, এখনো ৫ শতাধিক পরিবারের ক্ষতিপূরণ নিয়ে শঙ্কা
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ ৯২ শতাংশ শেষ হলেও স্থানীয় পাঁচ শতাধিক পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশের প্রথম এই টানেলটি উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রকল্পের বহু লেন সড়কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, চাতরী ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবারের আড়াইশ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ চলতি মাসে পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণে দাবিদার, মামলা-মোকাদ্দমাসহ নানা জটিলতার কারণে স্থানীয় এই পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করতে পারেনি।
গত ৩১আগস্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা দেয়, আগামী ৩১ অক্টোবরের পরে এই প্রকল্পের আর কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ফাইল জমা নেওয়া হবে না। শেষ হওয়ায় তারা তাদের প্রকল্পের কাজ সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করবে।
বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, স্থানীয় সাংসদ, ভূমিমন্ত্রীকে বিষয়গুলো জানিয়েছেন।
মূলত অংশীদারদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ, প্রকৃত মালিকানা ও ভুল বিএস রেকর্ড নিয়ে আদালতে মামলা, নাবালক-নাবালিকাদের অভিভাবক নিযুক্ত সংক্রান্ত জটিলতা, করোনাকালীন অফিস আদালত বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহে বিলম্ব, বিদেশে অবস্থানসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে পারেনি। এ কারণে পুনর্বাসন কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদ আরো ৫ বছর বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর ক্ষতিগ্রস্তরা স্থানীয় চেয়ারম্যান নোয়াব আলীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন ও পুনর্বাসন) ড. অনুপম সাহা বরাবর জনস্বার্থ বিবেচনায় পুনর্বাসন কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানান। এতে বলা হয়, ১৯৭৯-৮০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বৈরাগ ইউনিয়নের আশেপাশের এলাকায় কয়েক দফা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। উন্নয়নের স্বার্থে এখানকার মানুষ বরাবরই সহযোগিতা করে আসছে। সর্বশেষ টানেল প্রকল্পের জন্য বৈরাগ মৌজা থেকে ২০ হেক্টরের বেশি জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়।
স্থানীয় বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, "বৈরাগ এলাকার মানুষ অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। গত দুই বছর করোনার কারণে অনেক কিছুই স্বাভাবিক ছিল না। তাই পুনর্বাসনের মেয়াদ বাড়িয়ে সবার ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার আবেদন জানাচ্ছি।"
টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, "আমাদের প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য নিয়োজিত সংস্থাগুলো কাজ করেছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে, মানুষ যেন ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ পান।"
দুই টিউব সংবলিত মূল টানেল হবে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। এর মধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে এ প্রকল্পে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার যোগান দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এ টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হলে এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কোনো নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম সুড়ঙ্গপথ। প্রকল্পটির এক প্রান্ত পতেঙ্গা এবং অন্য প্রান্তটি হচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা। টানেলের মূল সংযোগ সড়ক বন্দর, রাঙ্গাদিয়া, বৈরাগ ও চাতরী মৌজার অংশ দিয়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে পিএবি ছয় লেন সড়কে।