কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশ: দু’দিন আগে থেকেই আসছেন নেতাকর্মীরা
শনিবার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিএনপি) বিভাগীয় সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই কুমিল্লায় জড়ো হয়েছেন আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ।
সূত্র জানায়, আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কা থাকায় বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে এক লাখের বেশি মানুষ এসেছেন নগরীতে।
পাশাপাশি জেলা শহরের সবগুলো হোটেলের সিট ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, হোটেল-মোটেল ছাড়াও আত্মীয়স্বজনদের বাসায় অবস্থান নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির একাধিক নির্ধারিত স্থানেও অনেকে অবস্থান নিয়েছেন।
শিক্ষা, চাকরি, চিকিৎসা ও সহজ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রচুর মানুষের বসবাস কুমিল্লা শহরে। এ কারণে বাইরে থেকে আসা বিএনপির কর্মীদের কুমিল্লায় অবস্থান নিতে বেগ পেতে হচ্ছে না।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক হাজি আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন বলেন, "এ সমাবেশ হবে আমজনতার। কারণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের অনাচারে মানুষ আজ দিশেহারা। মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ব্যাপক থাকবে গণসমাবেশে।"
তার ধারণা, সমাবেশে চার লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে।
ইয়াছিন আরো জানান, সমাবেশস্থল টাউন হলে মঞ্চ নির্মাণ করা হলেও, কর্মীরা অবস্থান নিবে কান্দিরপাড় হতে শুরু করে টমছমব্রিজ, শাসনগাছা, চকবাজার ও ফৌজদারী মোড় পর্যন্ত।
বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, "আইয়ুব খান পাকিস্তানে অনেক উন্নয়ন করেছেন। তারপরও মানুষের ভোটাধিকার হরণ করায় তার পতন হয়েছিল। এ সরকার মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে। মানুষ আজ বিক্ষুব্ধ।"
"আমি ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন ব্যক্তি। আমার মনে হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি গণঅভ্যুত্থানকেও হার মানিয়েছে। মানুষ ওই সময়ের চেয়েও বেশি বিক্ষুব্ধ," বলেন তিনি।
এখনো ডাকা হয়নি পরিবহন ধর্মঘট
ময়মনসিংহ ব্যতীত বিএনপির অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হলেও ২৪ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত কুমিল্লায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়নি মালিক ও শ্রমিক পরিবহনের কোনো পক্ষ।
সূত্র বলছে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কুমিল্লায় কোনো পরিবহন ধর্মঘট কাজে আসবে না। জেলার রেললাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম, নোয়াখালী-ঢাকা ও চাঁদপুর-চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত। এছাড়া দেশের লাইমলাইট খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০৫ কিলোমিটার কুমিল্লার ওপর দিয়ে গেছে।
তাই কুমিল্লায় পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হলে দেশের অর্থনীতির ওপর বিরাট আঘাত আসতে পারে। এ কারণে কুমিল্লায় ধর্মঘট ডাকার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
আরেকটি সূত্র বলছে, কুমিল্লা নগরীর সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর বেশিরভাগের সিদ্ধান্ত আসে সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশনায়। সমাবেশের সময় কুমিল্লায় স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলাচল রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দি মোটরস অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লার সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার বলেন, "ধর্মঘটের ব্যাপারে পরিবহন সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেননি। ধর্মঘট না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।"
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক হাজি আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন বলেন, "আমরা শুনে আসছি পরিবহন ধর্মঘট হবে না। এমন হলে আমাদের কর্মীরা সমাবেশের দিনই আসতে পারতেন।"
"কিন্তু এই সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা মুখে একটা বলে, অন্তরে অন্যটা ধারণ করে। সমাবেশের আগে তারা বাস চলাচল সীমিত করে দিতে পারে, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা এমন তথ্য পাচ্ছি," জানান তিনি।