বিএনপির গণসমাবেশ: মিছিলে মুখর টাউন হল প্রাঙ্গণ, শুক্রবারেই দখল সমাবেশস্থল
শনিবার (২৬ নভেম্বর) কুমিল্লার টাউন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। সমাবেশ উপলক্ষে একদিন আগে শুক্রবার সকাল থেকে মিছিল নিয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণের সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিকাল ৪টা পর্যন্ত সমাবেশস্থলে ছড়ানো-ছিটানো উপস্থিতি থাকলেও এর সামান্য পরেই মিছিলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। খণ্ড খণ্ড ছোট ছোট মিছিল একসময় রূপ নেয় বড় মিছিলে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দখল হয়ে যায় টাউন হল প্রাঙ্গণ। পুরো টাউন হলে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা একের পর এক স্লোগান তুলতে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আর কোনো মিছিল টাউন হলে প্রবেশ করতে পারছে না। কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর, লিবার্টি মোড়, রামঘাটলায় অবস্থান নিচ্ছেন কর্মীরা।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থেকে আসা যুবদল নেতা শাহাবুদ্দিন ও রিপন বলেন, 'আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। খাবার কিনে খেতে কষ্ট হয়। আমরা পরিবর্তন চাই।'
দাউদকান্দি থেকে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা কয়েক হাজার নেতা-কর্মী টাউন হলের গণসমাবেশে এসেছি। মানুষের মধ্যে একরকম জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই জোয়ার পরিবর্তনের জোয়ার।'
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন বলেন, 'আমাদের ধারণার বাইরে নেতা-কর্মীরা হাজির হচ্ছেন। আগামীকাল জনসাধারণের উপস্থিতি পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।'
তিনি জানান, 'আমরা কয়েকশ মাইক প্রস্তুত রাখছি। সমাবেশের মূল মঞ্চ টাউন হলে থাকবে। নেতাকর্মীরা থাকবেন আশপাশের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এলাকায়। কান্দিরপাড় থেকে শাসনগাছা, টামছমব্রিজ, রানির বাজার, ফৌজদারী মোড় ও চকবাজার পর্যন্ত ব্যাপ্তি হবে গণসমাবেশের।'
এর আগে, কুমিল্লা টাউন হল মাঠ ও কুমিল্লার ঈদগাহে জুমার নামাজের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
টাউন হল মাঠের জামাতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। মাঠের আরেকপাশে জুমার নামাজ আদায় করেন সাবেক মেয়র বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু।
এদিকে শনিবার কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার ড. মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার বেলা ১১টায় কুমিল্লার একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
ড. মোশাররফ বলেন, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার কনস্টেবল বিশ্বজিৎ শর্টগান ঠেকিয়ে নির্মমভাবে ছাত্রদল নেতা নয়নকে হত্যা করেন। অথচ মামলা দেয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে।'
তিনি বলেন, 'কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এ উপজেলায় ক্ষমতাসীনরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এখানকার বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা হিরু আর হুমায়ুনকে ৯ বছর গুম করে রাখা হয়েছে। এখানে বিএনপি ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার বাজারে ১৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু সস্ত্রীক হামলার শিকার হয়েছেন। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ১০-১২ দিন ধরে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে সরকারি দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
'সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে ভীতি প্রদর্শন করছে। ২১ নভেম্বর মধ্যরাতে লাকসাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদের বাড়িতে গিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ পরিচয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। লিফলেট বিতরণ করায় চাঁদপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিম উল্লাহ সেলিমের বাড়িসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। ২৩ নভেম্বর হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় ঘরে ঘরে তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে।
'গত ১৯ নভেম্বর কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের খিলা ইউনিয়নের বাতাবাড়ীয়া গ্রামে গণসমাবেশ উপলক্ষে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের প্রস্তুতি সভায় হামলা চালিয়ে স্থানীয় ছাত্রদল নেতা লিটনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতে ছাত্রদল ও যুবদলের ৩ নেতাকর্মী আহত হন। তার আগেরদিন সন্ধ্যার পর লাকসাম পৌর এলাকার চাঁদপুর রেলগেট এলাকা থেকে লাকসাম পৌর ১নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা আমান উল্লাহকে তুলে নিয়ে লাকসাম রেলক্লাবে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে তার মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।'
ড. মোশাররফ আরও বলেন, 'এই সরকার ভোট চোর সরকার। প্রধানমন্ত্রী যশোরের একটি সমাবেশে বলেছেন, আপনারা ভোট দিয়ে পলাতক নেতাকে ক্ষমতায় আনতে চান? এর মানে সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। এ কথা প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'আপনার দেখেছেন, সমাবেশকে উপলক্ষ করে গোটা কুমিল্লা নগরী উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এত বাধাবিপত্তির পরও আগের সাতটি সমাবেশ ব্যাপক শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কথা দিলাম, কুমিল্লার সমাবেশও শান্তিপূর্ণ হবে।'
মোশাররফ বলেন, 'সরকারের বিভিন্ন লোকজন বলছেন, খেলা হবে। এটা খেলা নয়, রাজনীতি। এই রাজনীতির মাধ্যমেই আমরা দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মেরামত করতে চাই।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন পূর্বাচল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত এসেছেন, তিনি নয়াপল্টনেও আসতে পারবেন।'
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নয়াপল্টনে আয়োজন করার অনুমতি দেওয়া না হলে মানবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, 'এটা আপনারা বুঝতেই পারছেন।'
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক হাজি আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন ও বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া।
এদিকে নেতা-কর্মীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কুমিল্লা জেলা বিএনপির নেতারা। দুই দিনে ১০টি গরু জবাই করেন হাজি ইয়াছিন। সাবেক মেয়র সাক্কুও লোকজনের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি ৭৮ টি ফ্ল্যাটে কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন।