‘রায়হান যেন চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া প্রথম ও শেষ এসএমএ শিশু না হয়’
"জিন থেরাপি ইনজেকশন নেওয়ার পর স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) রোগে আক্রান্ত শিশু রায়হানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে; আশা করছি, সে এক সময় হাঁটতেও পারবে," নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ জোবাইদা পারভিন এ কথা বলেন।
কৌশিকী, তাসনুভাসহ আর যে শিশুরা এসএমএ রোগে আক্রান্ত তারাও যেন এই চিকিৎসা পায় সেজন্য সরকার, দাতা সংস্থা ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে রায়হানই প্রথম শিশু, যে বিরল নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের চিকিৎসায় ২২ কোটি টাকার জিন থেরাপি ইনজেকশন বিনামূল্যে পেয়েছে। ২২ মাস বয়সী শিশুটি বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানি নোভার্টিসের বৈশ্বিক সিএসআর ক্যাম্পেইনের আওতায় লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে 'ওনাসেমনোজিন অ্যাবেপারভোভেক' নামক ব্যয়বহুল ওষুধটি পায়। প্রতিমাসে দুইজন শিশুকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করে বিনামূল্যে এই ওষুধ দিয়ে থাকে কোম্পানিটি।
রায়হানের রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে বৈশ্বিক প্রকল্পে নাম লেখানো পর্যন্ত, লটারিতে রায়হানের নাম আসার পর দেশে ওষুধ আনার ক্ষেত্রে তার চিকিৎসক ডাঃ জোবাইদা পারভিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জোবাইদা পারভিন বলেন, "ভারত, কানাডায় কিউর এসএমএ নামের সংগঠন আছে। তারা এসএমএ আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারকে সহায়তা করে। এই সংগঠন এসএমএ নিরাময়ের জন্য পরিচালিত গবেষণায় অর্থায়নের পাশাপাশি নির্দেশনাও দেয়। আমাদের দেশে এরকম কোনো সংস্থা নেই; আমরাও যদি এরকম কিছু গড়ে তুলতে পারি, তাহলে এসএমএতে আক্রান্ত শিশুরা চিকিত্সার সুযোগ পাবে।"
"ভারতও কিন্তু লটারিতে ওষুধ পেয়েছে, আবার তহবিল সংগ্রহ করেও ওষুধ কিনেছে। ভারতে ৪০টিরও বেশি শিশু জিন থেরাপি পেয়েছে। আরো দুটি ওষুধ আছে এসএমএ-এর জন্য, সেগুলোও তারা পেয়েছে। আমাদের দেশে যারা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আছেন, সংগঠন, দাতা সংস্থা আছে তারা সাহায্য করলে এ বাচ্চাগুলো বেঁচে যাবে। পাশাপাশি সমাজের বোঝা থেকে তারা সমাজের সম্পদে পরিণত হতে পারে", যোগ করেন তিনি।
ডাঃ জোবাইদা রায়হানের পর কুষ্টিয়া ও কক্সবাজারের আরো দুই শিশুর নাম লটারির জন্য এনরোল করেছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, "আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এসএমএ রোগীদের ইনজেকশন নিয়ে সরকারের সাথে কথা বলার পরিকল্পনা করেছে। লটারি তো সারা জীবন পাওয়া যাবে না। কিছুদিনের মধ্যে আমাদের দেশের জন্য এটি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমরা চেষ্টা করবো বাংলাদেশ সরকার, দাতা সংস্থা, যারা দান করে, তাদের সঙ্গে কথা বলে তহবিল সংগ্রহ করার, যাতে ওষুধটি বাংলাদেশের কিছু বাচ্চাকে হলেও কিনে দিতে পারি।"
"নোভার্টিসের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। এই ইনজেকশনের দাম কমানোর আলোচনা চলছে। ওরা আমাদের একটি ধারণা দিয়েছে, যদি সরকার বছরে ৫ থেকে ৭টি ইনজেকশন কেনে, তাহলে ওরা হয়তো দাম কমাবে," যোগ করেন ডাঃ জোবাইদা।
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন এসএমএ আক্রান্ত রোগী আসে। এছাড়া, রাজধানীর শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এসএমএ রোগীর লক্ষণ বিষয়ে ডাঃ জোবাইদা বলেন, "শিশু ঘাড় নাড়াতে পারছেনা, হাত-পা নাড়তে পারছে না, শিশু অনেক বেশি নরম ও ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে– এই লক্ষণগুলো দেখলে অভিভাবকদের একটু সচেতন হওয়া উচিত। এরকম কিছু লক্ষ করলে যে কোনো ভালো জায়গা, বিশেষ করে মেডিকেল কলেজগুলোতে যেতে হবে।"
"এসএমএ রোগীদের যত তাড়াতাড়ি ওষুধ দেওয়া হবে, ততো দ্রুত তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। রায়হানকে যদি এই ইনজেকশন ৬ মাস বয়সে দিতে পারতাম, তাহলে এতদিনে রায়হানের দাঁড়াতে পারার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যেতো," যোগ করেন তিনি।