খুলে দেওয়া হলো ডার্ড গ্রুপের ৪টি পোশাক কারখানা
ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর ও রাজফুলবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত ডার্ড গ্রুপের ৪টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার ৩ দিন পর খুলে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ই ডিসেম্বর) সকাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করা হয়েছে।
কারখানাগুলো হলো- দীপ্ত এপারেলস লিমিটেড, দীপ্ত গার্মেন্টস লিমিটেড, ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড ও ডার্ড ওয়াশিং প্লান্ট লিমিটেড।
এর আগে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টা নাগাদ নতুন এক নোটিশে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানাগুলো খোলা থাকবে বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ।
দীপ্ত এপারেলস লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রতিষ্ঠানটির মিড লেভেল কর্মীদের বকেয়া বেতন সংক্রান্ত জটিলতাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতেই কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে সোমবার মালিকপক্ষ আবারো কারখানাগুলো পুনরায় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।"
গ্রুপের সাভার জোনের সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর মো. আসাদ বলেন, "সোমবার রাতে কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সকাল থেকে শ্রমিকরা সুশৃঙ্খলভাবে কাজে যোগ দিতে শুরু করেছে, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।"
এসব কারখানায় প্রায় ১০ হাজারের মত কর্মী রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে ডার্ড গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক (সাভার জোন) সাক্ষরিত পুনরায় জারিকৃত এক নোটিশে বলা হয়, "কিছু অবাধ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর উচ্ছৃঙখলতা ও বেআইনি ধর্মঘটের কারণে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে জরুরি ভিত্তিতে গত ০৩/১২/২০২২ ইং তারিখ থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে সকলের অনুরোধ ও চাকুরীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ০৬/১২/২০২২ ইং তারিখ হতে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
নোটিশে কোনপ্রকার গুজবে কান না দিয়ে সকল কর্মীকে সুশৃঙ্খলভাবে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দীপ্ত এপারেলস লিমিটেডের সুইং সুপারভাইজার মোখলেছুর রহমান বলেন, "কারখানা খুলে দিয়েছে এটা ভালো, কিন্তু কাজ করে যদি সময়মত বেতন না পাই, তাহলে তো কারখানা খোলায় আমাদের কোন লাভ নেই। কর্তৃপক্ষ কারখানা খুলে দিয়েছে, আমরাও কাজে যোগ দিচ্ছি, দেখা যাক বকেয়া পাওনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেয়"।
কারখানার মিড লেভেল কর্মীদের মোট ২ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ২১ ও ২২ নভেম্বর দুই মাসের বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে কারখানায় কর্মবিরতি পালন করে দীপ্ত এপারেলস লিমিটেডের মিড লেভেল কর্মীরা। পরবর্তীতে মালিকপক্ষ কর্মীদের এক মাসের বকেয়া পরিশোধ করে। কিন্তু কর্মীদের বাকি বকেয়া পাওনার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় এসব কর্মীর মালিকপক্ষের প্রতি তাদের বকেয়া পরিশোধের জন্য চাপ দিলে কারখানা কর্তৃপক্ষ গত ৩ ডিসেম্বর থেকে গ্রুপের ৪টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
সেসময় আন্দোলনরত এসব কর্মীরা জানান, বকেয়া পাওনা রয়েছে দীপ্ত এপারেলস লিমিটেডের এমন কর্মীর সংখ্যা অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০। যদিও দীপ্ত এপারেলসের ব্যবস্থাপক (এডমিন) মাজহারুল ইসলাম টিবিএসের কাছে দাবি করেছিলেন এই কর্মীদের সংখ্যা দুইশোর বেশি নয়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডার্ড গ্রুপের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, "কিছু শ্রমিকের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য করে; তা সত্ত্বেও শ্রমিকদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের টপ ম্যানেজমেন্ট কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সকল কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মোহাম্মাদ কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।