বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কথা ভাবছে সরকার
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে দেশের বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনার কথা ভাবছে সরকার। দাম কমানো যায় কিনা তা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
বাজারে নিত্যপণ্যের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমার আভাস জনগণের জন্য কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতি তিনমাসে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা যায় কিনা তা বিপিসিকে জানাতে বলেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল গণমাধ্যমে বলেছেন, "আমরা ইতোমধ্যেই বিপিসিকে তেলের দাম পুনর্বিন্যাস করার সকল সম্ভাবনা মূল্যায়ন করতে বলেছি।"
তিনি বলেন, "তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, কারণ দুই দিন দাম কম থাকলে তৃতীয় দিনে আবার দাম বেড়ে যায়।"
'ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান' নিয়ে তৃতীয় স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের পর মন্ত্রী বলেন, "আমি মনে করি, প্রতি তিনমাসে একবার তেলের দাম সমন্বয় করতে পারলে সেটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের খোলা বাজারেও দাম বাড়ানো হবে এবং কমলে এখানেও দাম কমবে।"
চলতি বছরের ৪ আগস্ট, ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন এবং পেট্রোলের দাম ৪২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫১.৬ শতাংশ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ । পরে অবশ্য লিটার প্রতি ৫ টাকা কমিয়ে পুনরায় দাম নির্ধারণ করা হয়।
সে সময়ে, ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৯০.৬৬ ডলার, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫.১৮ ডলারে।
তবে বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে প্রচুর পরিমাণে পরিশোধিত তেল আমদানি করে, যা অপরিশোধিত তেলের চেয়ে ব্যারেল প্রতি প্রায় ২৫ ডলার বেশি।
এদিকে, জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে; তবে দাম কমার এই ধারার দেড় মাস পার হওয়ার আগ পর্যন্ত এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না।
"এই মুহূর্তে আমরা যে জ্বালানি সরবরাহ করছি, তা এক বা দুই মাস আগে আমদানি করা হয়েছিল; তখন বিশ্ববাআজারে জ্বলানির দাম ছিল বেশি। তাই যদি আমরা স্থানীয় বাজারে তা সমন্বয় করতে চাই, তবে আমাদের কমপক্ষে দুই মাস পর্যবেক্ষণ করতে হবে," বলেন তিনি।
এদিকে বিদ্যুতের খুচরা মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেন, "এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে বিইআরসির ওপর। তবে আমরা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।"
প্রতিমন্ত্রী বলেন, "মূল্য সমন্বয় বিশ্ব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে, কারণ আমরা জ্বালানির একটি বড় অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করি।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী বলেন, "কার্বন প্রশমন আমাদের দায়িত্ব নয়, এটি উন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য। কার্বন নিঃসরণের জন্য আমরা দায়ী নই। তাদের তুলনায় আমরা অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করি।"
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, তার দেশ শূন্য কার্বন নিঃসরণ নীতিতে বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, "আমি আশা করি বাংলাদেশও একইভাবে এগিয়ে যাবে। জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।"
আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের মার্চ নাগাদ ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত হবে।