হাওড়-বিল-নদীর ক্ষতির জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ন
দেশের হাওড়, বিল ও নদীগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হিসেবে এসকল অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও ব্রীজ-কালভার্ট ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
আগামী ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সায়েন্স অ্যানেক্স ভবন প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী পরিবেশমূলক সমাবেশ ও সম্মেলনের আয়োজন করবে পরিবেশবাদী এ সংগঠন দুটি। সম্মেলনের মাধ্যমে পরিবেশের বর্তমান চিত্র, তার প্রতিকার ও সচেতনতা তুলে ধরা হবে বলে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান ও বাপা'র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, এ বছর দেশের হাওড়, বিল ও নদীগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য দায়ী সেই সকল অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও ব্রীজ-কালভার্ট ব্যবস্থা।
তিনি দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো গ্রহণের আগে পরিবেশের দিকটি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
পরিবেশ সমাবেশ কমিটির সদস্যসচিব আলমগীর কবির বলেন, দেশে সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের দ্রুত অবক্ষয় হচ্ছে। বহু নদ-নদী শুকিয়ে ও দখল হয়ে গেছে। খাল, বিল, পুকুর-দীঘি, হাওড় হারিয়ে যাচ্ছে। যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা আজ চরমভাবে দূষিত।
তিনি আরও বলেন, বহু স্থানে দূষণের কারণে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের বন ও পাহাড়ের পরিবেশের প্রকট অবক্ষয় চোখে পড়ছে। এমনিতেই বাংলাদেশে বনের পরিমাণ কম। যেটুকু ছিল তাও দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে মধুপুর ও গাজীপুরের শালবন বিলীন হচ্ছে। বসতি স্থাপন, বাগান ও অন্যান্য কৃষির সম্প্রসারণ, বিভিন্ন সরকারি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল সংকুচিত ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ে বসবাস করা মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যন অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, 'যদিও আমাদেরে এ আয়োজন জাতীয় পর্যায়ে কিন্তু পরিবেশের সমস্যাটি এখন আর জাতীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই বরং এটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের এ সমাবেশ এবং সম্মেলনের ফলে পরিবেশের বিষয়টি যেন আগামী নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে স্থান পায় এবং ডেল্টাপ্লান ও এসডিজি বিষয়ে গুরুত্ব পায়।'
তিনি বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা প্রথম অথবা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে দেখা যায়। হাতেগোনা কয়েকটি দেশ বায়ুদূষণ মুক্ত হলেও পৃথিবী বায়ুদূষণ মুক্ত নয়। এজন্য সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিকার তৈরি ও তৃণমূল পর্যায়ে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে, তা তুলে ধরতে পরিবেশমূলক সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।
সম্মেলন বিষয়ের মূল বক্তব্যে বাপা নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম বলেন, দেশের হাওড়, নদী, এবং বিলসমূহের নানামুখী সংকটের পেছনে আছে বিভিন্ন বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক কারণ। বৈশ্বিক কারণসমূহের মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন যার ফলে বাংলাদেশের নদ-নদী প্রবাহের ঋতুভেদ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আঞ্চলিক কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে উজানের দেশসমূহ কর্তৃক বাংলাদেশে প্রবেশকারী নদনদীর প্রবাহ অপসারণকারী ও বাধা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং অববাহিকা অঞ্চলে বনাঞ্চল নিধন ও অবাঞ্ছনীয় ভূমি-ব্যবহার ও ভূমিরূপ পরিবর্তন ইত্যাদি।
বেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, সমাবেশে ও সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানের পরিবেশের ক্ষতির স্বীকার এমন জনগণ জমায়েত হয়ে তাদের দুর্ভোগের কথা বলবে; সেই কথাগুলো বাপা সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিকট পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।