বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে সীমাহীন উন্মাদনা: কী বললেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
গত ১৮ই ডিসেম্বর দম বন্ধ করা ফাইনাল ম্যাচে টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা।
অসাধারণ, অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় কিংবা অন্য কোনো শব্দ। কোনো শব্দ দিয়ে সেদিনের ম্যাচটিকে উপমায় বাধার উপায় নেই আসলে!
আর সব দেশের মতো ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে ছিল বাংলাদেশও। বিশেষ করে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষদের সমর্থন ও ভালোবাসা এবার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বড় পর্দায় শত শত মানুষ এক সাথে ম্যাচ দেখেছেন। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখার ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এসবের মাঝেই নজর কেড়ে নেয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আরও কিছু খবর। জানা যায়, বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে দেশে মারা গেছে দশজনের বেশি মানুষ। ফাইনাল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিজয় উদযাপন করার সময় সিলেটে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান একজন।
বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উন্মাদনা, তার সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, কথা বলেছে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদের সাথে।
মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশের সমস্যার কারণে খেলা নিয়ে উম্মাদনা, ট্রল বেশি: ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ
খেলায় উত্তেজনা, উন্মাদনা থাকবে, কিন্তু খেলা নিয়ে আমরা যে আবেগটা দেখাই তা নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। ইমোশনাল কোয়াশিয়েন্ট (আবেগাঙ্ক) যখন মাত্রাতিরিক্ত বা মাত্রার চেয়ে কম হয় তখন যেকোনো বিষয়ে মানুষ তার আবেগের সুষম প্রকাশ করতে পারে না।
মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ যদি সুষম না হয় তাহলে শুধু ফুটবল নিয়ে নয়, যেকোনো বিষয় নিয়ে উন্মাদনা, আবেগের অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ, ট্রল করা, উত্তেজনা, আগ্রাসন এমনকি অন্যকে হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটে। এটি হলো মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশের দুর্বলতা।
আবেগের বহিঃপ্রকাশে দুর্বলতার কারণ শৈশবে আবেগের বিকাশকে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশি সেটি বেশি। কারণ আমাদের দেশে আবেগকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
আমরা শারীরিক বিকাশকে গুরুত্ব দেই। শিশু লম্বা হচ্ছে কি না, খাচ্ছে কি না, কথা বলছে কি না তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ছোটবেলায় একটা মেয়ে যখন জোরে জোরে হাসে তখন আমরা বলি মেয়েদের এত জোরে হাসতে নেই। একটা ছেলে যখন কাঁদে তখন আমরা বলি—'তুমি মেয়ে নাকি যে কাঁদছ?'
এভাবে আমরা ছোটবেলা থেকেই আবেগের বিকাশকে অবদমিত করি। এই অবদমিত আবেগের বিকাশ ভবিষ্যতে আবেগের বহিঃপ্রকাশের সমস্যা তৈরি করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবজারভেনশনাল লার্নিং। এখন মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অন্যের রিকগনেশন চায়। বিশেষ করে ট্রল করে বেশি লাইক, কমেন্ট চায়। তার নিজের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে অন্যের স্বীকৃতি চায়।
শুধু খেলা নয়, আবেগের বহিঃপ্রকাশের সমস্যার কারণে পারিবারিক সহিংসতা, সামাজিক সহিংসতা, রাস্তাঘাটে মানুষের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। তাই আবেগের বহিঃপ্রকাশকে শৈশব থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদেরও অন্যের আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরেকজনের আনন্দে আনন্দিত বা দুঃখে দুঃখ পাই কি না দেখতে হবে। আবেগের বহিঃপ্রকাশ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।