প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ২৫ টাকা দিতে চায় শিল্প ব্যবসায়ীরা, সরকার চায় ৪০
শিল্পে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সরকার প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বিদ্যমান ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ২৫ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি আছেন।
তবে, সরকার স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস না কিনলে বর্তমানের চেয়ে দাম বাড়ানোর বিপক্ষে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ ডিসেম্বর বিডা-তে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বলানি প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গ্যাসের চাহিদা, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় জ্বালানি সচিব প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেন। তবে ওই সভায় এ বিষয়ে আপত্তির কথা জানান ব্যবসায়ীরা।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এক সভায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের শর্তে সর্বোচ্চ প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ২৫ টাকা পর্যন্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে। সভায় টেক্সটাইল ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে ওইদিনই সালমান এফ রহমানের কাছে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
বিকেএমইএ এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, "১৫ ডিসেম্বরের সভায় জ্বালানি সচিব প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে আমরা ক্যালকুলেশন করে দেখিয়েছি, এটি সর্বোচ্চ ২২ টাকা হতে পারে। ৪০ টাকা কীভাবে হয় তার সঠিক ব্যাখ্যা তিনি আমাদের দিতে পারেন নি।"
"এরপর ২০ ডিসেম্বর এফবিসিসিআই'র সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস ক্রয় করা হলে আমরা বাড়তি কিছু দাম দিতে রাজি। কিন্তু স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় না করা হলে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।"
বিটিএমএ এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন টিবিএসকে বলেন, "প্রতি কিউবিক মিটার গ্যাসের দাম ৪০ টাকা করার জন্য একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা বলেছি, জনগণের জন্য ভর্তুকির দায় শিল্পের উপর যাতে না দেওয়া হয়।"
এ বিষয়ে জানতে এনার্জি অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ডিভিশনের সিনিয়র সেক্রেটারি মো. মাহবুব হোসেন এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
সর্বশেষ গত জুন মাসে শিল্পে ব্যবহার হওয়া গ্যাসের মূল্য (প্রতি কিউবিক মিটার) ১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়।
তবে মুল্য বাড়ানোর পর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে শিল্পে সংকট তৈরি হয়। বিটিএমএর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের সদস্যভুক্ত গ্যাসভিত্তিক শিল্পগুলোর উৎপাদন ৪০ শতাংশে নেমে আসে গ্যাস সংকটের কারণে।
অবশ্য গত ১০ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে। উদ্যোক্তারাও বলছেন, কিছু এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
যদিও গরম কমে যাওয়ায় এসি ও ফ্যানের ব্যবহার কমে যাওয়া এর মূল কারণ। আলী খোকন বলেন, "এসির ব্যবহার কমে যাওযায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত বর্তমানে সেভ হচ্ছে।"
কিন্তু গরম বাড়তে থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা, সে উদ্বেগও রয়েছে তাদের।