ছুটির দিনে আবাসন মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়, চাহিদার তুঙ্গে ছোট-মাঝারি আর রেডি ফ্ল্যাট
চলমান আবাসন মেলার তৃতীয় দিন শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় ক্রেতা সমাগম অন্য দুই দিনের তুলনায় অনেক বাড়ে। এবার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট ও মাঝারী আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি পাচ্ছে। এছাড়া ক্রেতাদের রেডি ফ্ল্যাট নেওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল।
শেলটেক লিমিটেডের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক একেএম রাফিউল ইসলাম বলেন, "আজই আমরা বেশি দর্শনার্থী পাচ্ছি। দুপুরের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের ছোট-মাঝারি-বড়-লাক্সারী সব ধরনের ফ্ল্যাটই আছে। তবে এবার ছোট ও মাঝারি ফ্ল্যাটের চাহিদা খুব বেশি। এছাড়া দাম বেশি পড়লেও তারা রেডি ফ্ল্যাটের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।"
একই কথা বলেন কনকর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, "সাধারণত ছোট ফ্ল্যাটগুলো ১০০০-১৩০০ স্কয়ার ফুট ও মাঝারী ফ্লাটগুলো ১৩০০ থেকে ১৬০০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে হয়ে থাকে। এগুলোর দাম ১-২.৫ কোটি টাকার মধ্যে হয়। স্থানবিশেষে দামের কিছুটা হেরফের হয়। এবার এই ফ্ল্যাটগুলো চাহিদার শীর্ষে আছে।"
স্ত্রী সহ মাঝারী সাইজের একটি ফ্ল্যাট কেনার উদ্দেশ্যে আসেন চাকরিজীবী মনির আহমেদ। তিনি বলেন, "আমরা ঢাকায় বহুদিন ধরে ভাড়ায় থাকছি। এখন চাচ্ছি নিজেদের একটা ফ্ল্যাট হোক। মেলায় আসলাম, ঘুরে দেখছি ১ কোটি টাকার মধ্যে আফতাবনগরে কোন রেডি ফ্ল্যাট পাওয়া যায় কিনা। আমরা রেডি ফ্ল্যাট ছাড়া নেব না।"
রেডি ফ্ল্যাটই কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "নির্মাণ কোম্পানিগুলোর উপরে খুব একটা আস্থা করা যায় না এখন। তাছাড়া টাকা দিয়ে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা, অন্যদিকে সময়মত ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিলে ভাড়াও গুনতে হয় আবার ব্যাংকের লোনও শোধ করতে হয়। যেটা কষ্টসাধ্য।"
১১০০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে বনশ্রীতে ফ্ল্যাট খুঁজছিলেন তামান্না হক। তিনি বলেন, "আমি ছোট একটা ২ বেডরুমের রেডি ফ্ল্যাট খুজছি। এখানে এক জায়গায় কয়েকশ স্টল আছে। নিজের মত করে খুঁজে নেওয়া যায়। কিন্তু আমার ৭৫ লাখ টাকা বাজেট। জানিনা এর মধ্যে পাব কিনা।"
ছোট ও মাঝারি ফ্ল্যাট ছাড়াও ব্যাপক চাহিদা আছে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টেরও। মেলায় আসার আগেই অনেকের এই ধরনের আধুনিক সিংগেল অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়ে গেছে।
র্যাংগস প্রপার্টিজের হেড অব সেলস আখতার হোসেন বলেন, "স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা এত বেশি যে আমাদের একটি প্রজেক্টের ৩২ অ্যাপার্টমেন্টের সব বিক্রি হয়ে গেছে বানানোর সময়ই। এই মেলায় ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও আমরা দিতে পারছি না।"
কনকর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আফজাল হোসেনও বললেন, "ব্যাপক চাহিদার কারণে আমরা খিলক্ষেতে পুরো একটি প্রজেক্ট শুধু স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট করেছিলাম। সেখানে ১২০টি অ্যাপার্টমেন্টের সব বিক্রি হয়ে গেছে অল্প সময়ের মধ্যেই। মেলায় ক্রেতারা আগ্রহ দেখালেও আমরা দিতে পারছিনা।"
চাহিদা থাকার কারণে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের প্রজেক্ট সামনে অনেক আসবে বলে জানান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
শুক্রবার সকাল ১০টায় আবাসন মেলা শুরু হয়। তবে দুপুরের পর থেকে দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট হতে শুরু করে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় আগতরা স্টল ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা প্লট দেখেন, ফ্ল্যাট ও প্লটের খোঁজ নেন।অংশগ্রহণকারী ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজেদের ফ্ল্যাট এবং প্লটের ভাল দিকগুলো আগতদের সামনে তুলে ধরেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দেন বিভিন্ন ছাড় ও উপহার। সন্তুষ্ট হয়ে কেউ কেউ মেলাতেই বুকিং সম্পন্ন করেছেন।
আব্দুল্লাহপুর থেকে আসা নাফিজা ইয়াসমিন বলেন, "গত দুই দিন অফিস থাকায় মেলায় আসতে পারিনি। আজ ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় এসেছি। উত্তরাতে কয়েটি কোম্পানির প্রজেক্ট মানানসই দেখলাম। কোনটাতে বুকিং দেব সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নিচ্ছি।"
মেলায় আসা তৌহিদুজ্জামান বলেন, "অনেক আগেই পরিকল্পনা ছিল এই নগরীতে আবাসনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু ব্যস্ততা আর অর্থের স্বল্পতার কারণে এতোদিনে হয়ে উঠেনি। নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে এবার ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখছি। এজন্য মেলাতে এসেছি, ঘুরে ঘুরে দেখছি। মোহাম্মদপুর এলাকায় কোন ফ্ল্যাট সাধ্যের মধ্যে হলেই বুকিং দিব।"
রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, "এবারের মেলায় আবাসন খাতের কোম্পানিগুলো ছোট ও মাঝারিসহ সব ধরনের ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে এসেছে। তুলনামূলক দামও কম। তাই যারা কিনতে চায় তাদের এবার কেনা উচিৎ। ভবিষ্যতে এই দামে ফ্ল্যাট হয়ত আর পাওয়া যাবে না।"
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ২১ ডিসেম্বর থেকে চলছে রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২, শেষ হবে আগামী ২৫ ডিসেম্বর। মেলায় মোট ১৮১টি স্টল রয়েছে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। তবে শেষ দিন রোববার মেলা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।