বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি: ৭ বছরেও ফরেনসিক তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি সিআইডি
সাত বছরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার ফরেনসিক তদন্ত শেষ করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
হাই-প্রোফাইল এই মামলার চার্জশিট দাখিল এ পর্যন্ত ৬৭ বার পিছিয়েছে।
সম্প্রতি সিআইডি তদন্তের সামগ্রিক অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতকে অবহিত করার বিষয়টি আইনি নথি দেখে জানতে পেরেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম অ্যান্ড অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান চার্জশিট তৈরি না হওয়ার কারণ হিসেবে আদালতের কাছে দুটি বিষয় তুলে ধরেছেন। প্রথমত, সিআইডি শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই মামলার বিষয়ে তথ্য চেয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পায়নি। দ্বিতীয়ত, সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি।
আদালতে দায়ের করা তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মতিঝিল থানায় মামলা দায়েরের পর সিআইডি তদন্ত শুরু করে।
ফরেনসিক তদন্ত হলো সন্দেহভাজন কারও বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার জন্য অপরাধ সম্পর্কিত সমস্ত ভৌত প্রমাণ সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ।
সাইবার ডাকাতির ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা আঙ্গুলের ছাপ, হার্ড ড্রাইভ, কম্পিউটার বা অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো দেখে থাকে যার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হয়।
সিআইডি আদালতের নথিতে উল্লেখ করেছে যে, মামলা সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্ত প্রমাণাদি ফিলিপাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে পরিচালিত বেশিরভাগ তদন্তের কাজ শেষ হয়েছে।
তবে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব প্রতিবেদন না থাকার দাবিটি অদ্ভুত কারণ এর ফরেনসিক ইউনিট এবং আর্থিক অপরাধ ইউনিট ঢাকার মালিবাগে সদর দফতরে অবস্থিত।
কেন প্রায় সাত বছরেও ফরেনসিক ল্যাব রিপোর্ট সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি, তা জিজ্ঞাসা করা হয় সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ-মহাপরিদর্শক শ্যামল কুমার নাথকে। এর উত্তর স্পষ্টভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
"আমি সম্প্রতি ফরেনসিক বিভাগে যোগদান করেছি এবং আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু আগে যা ঘটেছে, সে বিষয়ে আমি বলতে পারছি না," বলেন শ্যামল কুমার নাথ।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক রিজার্ভ চুরির বিষয়ে সংস্থাটি তিন থেকে চারটি দেশের কাছে তথ্য চেয়েছে।
সে সময় সিআইডি প্রধান ফরেনসিক ল্যাব রিপোর্টের বিষয়টি উল্লেখ না করলেও বলেছিলেন, "চাওয়া তথ্যে অ্যাক্সেস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদালতে চার্জশিট জমা দিতে প্রস্তুত রয়েছে সিআইডি।"
গত ২৯ নভেম্বর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সরকারি আদেশে দুই সিআইডি কর্মকর্তা, একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ফরেনসিক বিভাগের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ফিলিপাইনের মান্দালুয়ং শহরের আঞ্চলিক বিচার আদালতের কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২ অক্টোবর ঢাকার একটি আদালত সিআইডিকে চলতি বছরের ১৬ নভেম্বরের মধ্যে চুরির মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলে।
তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা রায়হান উদ্দিন খান দেশের বাইরে থাকায় গত ৪ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছে আবারও সময় চেয়েছে সিআইডি।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউইয়র্কের বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অজ্ঞাত হ্যাকাররা ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট পেমেন্ট সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে।
চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ম্যানিলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) এর চারটি অ্যাকাউন্টে ৮১ মিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে আরও ২০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা হয়।
তবে, হ্যাকারদের দ্বারা বানানে ভুল হওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কায় ২০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর শেষ মুহূর্তে আটকে যায়; শ্রীলঙ্কা থেকে ওই অর্থ ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পরবর্তীতে, ফিলিপাইন থেকে আরও প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দায়িত্বে অবহেলার জন্য আরসিবিসি থেকে জরিমানা হিসেবে এ অর্থ আদায় করা হয়।
তবে, প্রায় ৬৬ মিলিয়ন ডলার এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।