উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার এক বছর পেরোলেও খোলেনি গোলাপবাগ খেলার মাঠ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ধলপুর এলাকার গোলাপবাগ মাঠের উন্নয়ন কাজ প্রায় এক বছর আগে শেষ হলেও 'পরিচালনা কমিটির' অযুহাতে এখনও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি।
মাঠটি উন্মুক্ত করে দিলেও জনসাধারণের জন্য ব্যবহারের সুযোগ থাকবে কিনা সেটা নিয়েও সঙ্কিত স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের দাবি, মাঠটি যেন তাদের জন্য দ্রুত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, খুব তাড়াতাড়িই মাঠ পরিচালনা কমিটি গঠন করে মাঠটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
তবে মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২ থেকে ৪ ঘণ্টা পরিচর্যার সময় বন্ধ রাখা হতে পারে।
২০০৬ সালের পর এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যাক্ত থাকা গোলাপবাগ মাঠের উন্নয়নের জন্য 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন (মেগা)' শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালে এ মাঠের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কন্সটিটিউশন কয়েকবার কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের শেষের দিকে কাজ শেষ করে।
প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫ একর আয়তনের গোলাপবাগ খেলার মাঠের সীমানা প্রাচীর ও বেষ্টনী, প্যাভিলিয়ন, ড্রেসিং রুম, ওয়েটিং রুম, জিমনেশিয়াম, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, নর্দমা, হাঁটার পথ, পাঠাগার ভবন (লাইব্রেরি বিল্ডিং), বাজার (মার্কেট বিল্ডিং) ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে মাঠকে আধুনিকায়ন করে দক্ষিণ সিটি।
মাঠে বয়স্কদের জন্য ওয়াকওয়ে গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগারসহ নানা স্থাপনার মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মাঠের কাজ প্রায় এক বছর আগেই শেষ হয়েছে, কিন্তু মাঠ পরিচালনার জন্য কমিটি এখনও গঠন না হওয়ায় উন্মুক্ত করে দিতে সময় লাগছে।"
"স্থানীয় কাউন্সিলর, বাসিন্দাদের প্রতিনিধিসহ সবাইকে নিয়ে মাঠটি পরিচালনার জন্য একটি গঠন করা হবে। এছাড়া মাঠ ব্যবহারের নীতিমালাও ফাইনাল পর্যায়ে রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা মাঠটি খুলে দিবো," বলেন তিনি।
জানা যায়, ২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ মাঠ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে মাঠটি অবহেলিত অবস্থায় ছিল। পরে স্থানীয়দের দাবির মুখে মাঠ সংস্কারকাজ শুরু করে দক্ষিণ সিটি।
শনিবারে মাঠটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাঠের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কয়েকজন শ্রমিক ক্রিকেট পিচ তৈরী করছেন। সাথে শুকিয়ে যাওয়া ঘাসে পানি দিচ্ছিলেন একজন। মাঠের অধিকাংশ স্থানেই নতুন ঘাস জন্মাতে শুরু করেছে।
মাঠের পূর্ব পাশে তৈরী করা দর্শক গ্যালারী, বিশ্রামাগার, ব্যায়ামাগার, গণশৌচাগার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে তবে কিছুই চালু হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইমরান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত ৩/৪ বছর ধরে এ মাঠে কাউকে খেলতে দেখিনি। আগে এর চারিদিকে দোকান থাকলেও মাঠে খেলার সুযোগ ছিল। কিন্তু দোকানগুলো ভাঙ্গার পর মাঠের কাজ শুরু হলে আর আর খেলার সুযোগ পায়নি কেউ।"
৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহ নেওয়াজ টিবিএসকে বলেন, "আশপাশের এলাকায়ও কোনো খেলার মাঠ নেই। এ মাঠটি উন্মুক্ত করে দিলে স্থানীয় সবার জন্য খেলাধুলা ও হাঁটার জায়গা হতো।"
স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলী (৫৫) টিবিএসকে বলেন, "একদিকে ফ্লাইওভারের কাজের জন্য আটকিয়ে রাখা হয়েছিল মাঠটি, এরপরে মাঠ আধুনিকায়নের নামে ৪/৫ বছর ধরে আটকিয়ে রেখেছে দক্ষিণ সিটি।"
"মাঠের চারিদিকে হাঁটার রাস্তা করায় আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু এক বছর ধরেই মাঠ তালাবদ্ধ। ভিতরে প্রবেশের সুযোগ নেই। এতো আধুনিক করে লাভ কী যদি ব্যবহারেরই সুযোগ না থাকে?"
ইউডিসি কন্সটিটিউশনের সাইড ইঞ্জিনিয়ার হৃদয় কৃষ্ণ দাস টিবিএসকে বলেন, আমরা আরও এক বছর আগে মাঠের কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিয়েছি।"
এদিকে গোলাপবাগ মাঠের দর্শক গ্যালারি মার্কেটের ৪৩টি দোকান বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠিত হয় গত ১২ এপ্রিল। সে ব্যবসায়ীদেরও দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি এখনও। সিটি কর্পোরেশন বলছে মাঠ উন্মুক্তের সময় তাদের দোকানও বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল সরদার টিবিএসকে বলেন, "এ মাঠটি অনেকদিন ধরেই উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। এলাকাবাসী আমার কাছেও বিভিন্ন সময় অনুরোধ করেছেন খুলে দিতে কিন্তু সিটি কর্পোরেশন উদ্বোধন না করলে আমার পক্ষে তো সম্ভব না।"
তিনি আরও বলেন, "আমিও চাই মাঠটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। যদি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য প্রবেশ সংরক্ষিত করে দেয় সেটি মোটেও ঠিক হবে না।"
এ মাঠে গত বছর দক্ষিণ সিটির মেয়র কাপের বেশ কয়েকটি ক্রিকেট ম্যাচও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে জনসাধারণ কখনই মাঠটি ব্যবহার করতে পারেনি।
এবারের মেয়র কাপের কয়েকটি ক্রিকট ম্যাচও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ সিটি। এজন্য মাঠের ক্রিকেট পিচও নতুন করে তৈরী করা হচ্ছে। আগামী ৫ জানুয়ারি এ মাঠে অনুষ্ঠিত হতে পারে মেয়র কাপের একটি ক্রিকেট ম্যাচ।
নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় টিবিএসকে বলেন, মাঠ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেও দুই শিফটে ২ ঘণ্টা করে মোট ৪ ঘণ্টা মাঠ পরিচর্যার জন্য বন্ধ রাখা হতে পারে।