২৮ মাস ধরে বন্ধ গুলশানের ফজলে রাব্বি পার্ক, মেয়াদ বাড়লেও শেষ হয়নি সংস্কার কাজ
রাজধানীর গুলশান-১ এর শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি ২৮ মাসেও। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকায় পার্কটি ব্যবহার করতে পারছেন না এখানকার স্থানীয় লোকজন।
ডা. ফজলে রাব্বি পার্কে একসময় প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণ করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পথচারীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজনও সবুজে ঘেরা এ পার্কে সময় কাটাতে আসতেন। পার্ক বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে এখানে নিয়মিত হাঁটতে আসা বয়স্কদের।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে এ পার্কটি সংস্কারে কার্যাদেশ দেওয়ার পরে ২০২০ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম আর কনস্ট্রাকশন। এ কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। মেয়াদ বাড়ানোর পর আরও এক বছর কেটে গেলেও এখনও তারা শেষ করতে পারেনি পার্কটির সংস্কার কাজ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, করোনা এবং পার্কের ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে সময় বেশি লেগেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে এম আর কনস্ট্রাকশন।
তবে স্থানীয়দের এবং গুলশান সোসাইটির দাবি, যেন দ্রুত পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হাঁটার জায়গার কাজ শেষ করে পার্কটিকে হাঁটার উপযোগী করার দাবি তাদের।
পার্কটি দ্রুত খুলে দিয়ে স্থানীয়দের হাঁটার সুযোগ করে দিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মানববন্ধন করেন এখানে প্রাতঃভ্রমণকারীরা। পরে তারা ২ জানুয়ারি পার্কটি খোলার দাবিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর স্মারকলিপিও পাঠান।
গুলশানের স্থায়ী বাসিন্দা গোলাম রহমান টিবিএসকে বলেন, "সকালে আমরা পার্কটিতে নিয়মিত হাঁটতাম, আবার অনেকে এখানে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতেন। ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতো।"
"কিন্তু সংস্কারের নামে পার্কটিতে ইট পাথরের স্থাপনা বানাচ্ছে আর প্রায় তিন বছর ধরে এটি বন্ধ করে রেখেছে। কবে খুলবে সেটাও জানে না কেউ," বলেন তিনি।
এ এলাকার ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিবুল টিবিএসকে বলেন, "আমাদের আশপাশের কোনো খেলার জায়গা নেই। পার্কে খেলার জায়গা খুলে দিলে আমরা বন্ধুদের নিয়ে খেলাধুলা করতে পারতাম।"
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আধুনিকায়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন রূপে ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠের মধ্যে কয়েকটি পার্কের সংস্কার কাজ চলছে। এর মধ্যে গুলশানের ডা. ফজলে রাব্বি পার্কটিও রয়েছে। এ পার্কটির সংস্কার কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
গত সপ্তাহে পার্কটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পার্কের চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ভেতরে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। পার্কের দুটি ফটকের কাজ শেষ পর্যায়ে। হাঁটার পথে টাইলস বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। পার্কের উত্তর প্রান্তে একটি সার্ভিস ব্লক তৈরি করা হয়েছে। এ অংশে পার্ক ব্যবস্থাপনার কার্যালয়, নামাজের কক্ষ ও শৌচাগার থাকবে। সার্ভিস ব্লকের কাজ প্রায় শেষ।
নকশা অনুযায়ী হাঁটার পথের ওপর যে ছাউনি থাকবে, সেটির পাইলিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে। পার্কের ভেতরে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের কাজও শেষ। এখন একটি কৃত্তিম ডোবা এবং চারিদিকে সীমানা প্রাচীরের জন্য গ্লাস বসানো হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, পার্কের চারপাশের ১৫ ফুট উচ্চতার স্বচ্ছ কাঁচের সীমানা দেয়াল দেওয়া হচ্ছে। কাঁচের দেয়ালের কারণে সরাসরি বাতাস চলাচল করবে না। তা ছাড়া রাস্তার যানবাহন থেকে সৃষ্ট উচ্চ শব্দ কমাবে এই কাঁচ।
তবে দেয়াল যেহেতু উঁচু হবে, তাই পাখির চলাচলে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ কারণে কাঁচে সমান্তরাল অস্বচ্ছ রেখা বা বার্ড স্ট্রিপ থাকবে।
পার্কে শরীরচর্চার জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকবে। যেখানে ব্যায়াম করার কিছু সরঞ্জামাদি দেওয়া থাকবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে পার্কটিতে। কিছু পানি নিষ্কাশিত হবে, কিছু পানি নালার মাধ্যমে জলাশয়ে গিয়ে জমবে। এ ছাড়া সার্ভিস ব্লকের ছাদ থেকে সামনের দিকে ঢালু হয়ে কৃত্রিম টিলা তৈরী করা হয়েছে যেখানে সবুজ তৃণভূমি থাকবে।
এছাড়াও, বয়স্কদের পাশাপাশি সব বয়সী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে। সন্ধ্যার পর নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য পার্কের ভেতর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
এমআর কন্সটিটিউশনের প্রজেক্ট আর্কিটেক্ট খালিদ মনসুর টিবিএসকে বলেন, "আমাদের এখানে কাজ করতে গিয়ে মূল সমস্যা ছিল ওয়াসার একটি পাম্প। এর কারণে মাস্টারপ্ল্যান পরিবর্তন করতে হয়। এছাড়া করোনার কারণেও বিলম্ব হয়েছে কাজের। কাঁচের যে প্রাচীর দেওয়া হবে সেই নয়েজ ব্যারিয়ার আনা হয়েছে জার্মানি থেকে। ডিসেম্বরের মধ্যে আশা করি কাজ শেষ হয়ে যাবে।"
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, এলাকাবাসীর হাঁটার পরিবেশ তৈরির জন্যই পার্কটির উন্নয়ন কাজ চলছে।
"গুলশান একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যা কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত। এখানে যেমন তেমন পার্ক হতে পারে না। তাই এ পার্কটি সংস্কার করতে সময় বেশি লাগছে," বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে পার্ক উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "পার্কটির সংস্কার কাজের শুরুর পরে নকশা জটিলতায় ছয় মাসের মতো কাজ বন্ধ ছিল। আমরা ঠিকাদারকে বলেছি দ্রুত কাজ শেষ করতে।"