প্রতিনিধি ছাড়া সিন্ডিকেট সভার বিরোধিতা করছেন চবি শিক্ষকরা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ের (চবি) শিক্ষকদের অভিযোগ, কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়াই শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তারা বলছেন, আজকের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রশাসন আগামী দুই বছরের জন্য শিক্ষকদের নিয়োগ এবং পদোন্নতির বিষয়গুলো দেখতে দুটি সিলেকশন বোর্ড বা কমিটি (প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনের জন্য) গঠন করতে যাচ্ছে।
চবি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আবদুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়া এই সিন্ডিকেটে তড়িঘড়ি করে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বোর্ড গঠন করা হলে, সেখানে প্রশাসনের পছন্দের প্রতিফলন ঘটবে। এসব বোর্ড পক্ষপাতমূলক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আমারা জেনেছি, সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচিতে এমন এজেন্ডা রাখা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত থেকে তাদেরকে (উপাচার্য ও প্রশাসন) বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছি।"
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটের ১৬টি পদের মধ্যে ৮টি পদই শূন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যাক্রম চললেও নানান অজুহাতে গুরুত্বপূর্ণ এই পদগুলোর নির্বাচন দিচ্ছে না প্রশাসন। এই ৮টি পদের ৪টিতেই সরাসরি প্রতিনিধি নির্বাচন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৪ সদস্য ও ৭ সদস্যের দুটি সিলেকশন বোর্ড নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয় হয় এই কমিটিগুলো।
ডিন, শিক্ষক সমিতি এবং হলুদ দল (বাম ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন) নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসলেও তা কানে তুলছে না প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ সিন্ডিকেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৩ ডিসেম্বর ২০১৭।
শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের ভরাডুবির পর আতঙ্কে সিন্ডিকেট নির্বাচন দিচ্ছে না প্রশাসন।
প্রশাসনের আশঙ্কা, সিন্ডিকেট নির্বাচনেও ভিসিপন্থী প্রার্থীরা একই রকম ফলাফলের মুখোমুখি হতে পারেন।
গত ২৯ ডিসেম্বর উপাচার্যের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে শনিবারের সিন্ডিকেট সভায় সিলেকশন কমিটি গঠন করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
চবির শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রশাসনের পছন্দের ব্যক্তিরা নির্বাচনে নমিনেশন ও বিজয় পাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা থাকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সক্রিয় থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। ফলে প্রশাসন ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এজন্য তারা নির্বাচন দিতে চায় না।"
বিতর্কিত ১৭ শিক্ষক নিয়োগ
চলতি বছরের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় আপত্তি তোলার পরেও ১৭ শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, সিন্ডিকেটে কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসন এ ধরনের 'অবৈধ' নিয়োগ দিতে পারছে।
এদিকে, নির্বাচন ও নিয়োগের বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সিন্ডিকেটের সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান টিবিএসকে জানান, আগামী মাসের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা করছে প্রশাসন।
"শিক্ষক নিয়োগসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে সিন্ডিকেট। আমি এর বেশি বলতে পারবো না," বলেন তিনি।
আজ শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে; তবে বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি চবির রেজিস্ট্রার।