৩৮ আমদানি পণ্য বন্দর থেকে সরাসরি ডেলিভারি দেওয়ায় লোকসানে আইসিডি মালিকরা
২০১৮ সালের জুলাইতে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো বা আইসিডিগামী ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য বন্দর থেকে ডেলিভারি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঈদের সময় বাড়তি আমদানি হওয়া খাদ্যপণ্য ডেলিভারি নির্বিঘ্ন রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চার বছর ধরে বন্দর ইয়ার্ডে কোনো ধরনের জট না থাকলেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ একই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।
ফলে খাদ্যপণ্যসহ ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য আইসিডির পাশাপাশি বন্দর থেকেও ডেলিভারি নিচ্ছে আমদানিকারকরা। এতে বেসরকারি আইসিডিগুলো বিপাকে পড়েছে। সম্প্রতি বৈশ্বিক বাণিজ্যে মন্দার কারণে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে বলে দাবী আইসিডি মালিকদের। তাই এনবিআর নির্ধারিত ৩৮ ধরনের পণ্য শুধুমাত্র আইসিডি থেকে ডেলিভারির সিদ্ধান্ত বহালের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশে অফ ডক নামে পরিচিত অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোগুলো প্রায় ৯৫ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের চালান এবং ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের ব্যবস্থাপনা করে থাকে যার মধ্যে চাল, গম, সরিষা, ছোলা এবং ডাল রয়েছে।
আইসিডিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে এবং বন্দর এলাকার বাইরে আনলোড বা ডেলিভারির মাধ্যমে দ্রুত কনটেইনার খালি করতে সাহায্য করে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জানায়, আইসিডিগামী আমদানি পণ্য বন্দর থেকে ডেলিভারি নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রতি ৩ মাস পরপর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে কাস্টম।
গত ২৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের জয়েন্ট কমিশনার তফসির উদ্দিন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অফডকের পাশাপাশি বন্দরের অভ্যন্তর থেকে ডেলিভারি গ্রহণের সময়সীমা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) জানায়, এনবিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ২৩ শতাংশ পণ্য আইসিডি থেকে ডেলিভারি নেওয়ার কথা। কিন্তু কাস্টমসের দ্বৈত নীতির কারণে আইসিডিগামী পণ্যের ৫০ ভাগের বেশি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু টিবিএসকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিতে কন্টেইনার নিয়ে যেতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ হয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে আমদানিকারকরা আইসিডির পরিবর্তে বন্দর থেকে ডেলিভারি নেন।
এদিকে কাস্টমসের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিকডা। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ১৯টি আইসিডিতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কাজ করে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমদানিশ-রপ্তানি কমে যাওয়ায় এমনিতেই আইসিডির ব্যবসা কমে গেছে প্রায় ২৫ ভাগ। আইসিডির পরিচালন ব্যয় মেটাতে ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে আইসিডি মালিকরা। এমন পরস্থিতিতে আইসিডি মালিকদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়া কাস্টমসের এমন নীতি কাম্য হতে পারে না।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনারকে এক চিঠিতে বিকডা জানায়, '২০১৮ সালের জুলাই মাস হতে এই ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। যদিও ওই সময় থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে আইসিডিগামী আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের ভলিউম কম ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে অফডকগামী কন্টেইনারের ভলিউম ন্যূনতম পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কেন উক্ত আমদানি পণ্যসমূহ চট্টগ্রাম বন্দর হতে ডেলিভারি প্রদান করার অনুমতি বলবৎ রেখেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।'
বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, আইসিডি মালিকদের সঙ্গে কোনোপ্রকার আলোচনা ছাড়াই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বারবার এমনসিদ্ধান্ত দিচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনিতেই আমরা ব্যবসা পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে কাস্টমসের এমন সিদ্ধান্ত আইসিডি খাতকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার গত নভেম্বরে দ্বৈত ডেলিভারির সিদ্ধান্ত বাতিল করার আশ্বাস দিলেও পুনরায় একই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান এবং জয়েন্ট কমিশনার তফছির উদ্দিন ভুঁইয়ার সাথে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা সাড়া দেননি।