জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মেট্রোপলিটনগুলোতে ৪০০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসাবে পুলিশ
দেশের ১২তম জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের আগে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে সারাদেশে ১০টি মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রায় ৪০০০ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে পুলিশ। বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এ তথ্য।
নাইট ভিশন ফিচারযুক্ত উচ্চ মানের এ ক্যামেরাগুলো জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) গাজী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, "প্রায় পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে আমরা প্রথমবারের মতো মেট্রোপলিটন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু সেসময় আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পটি মঞ্জুর করা হয়নি।"
পুলিশ ইতোমধ্যে সরকার-চালিত ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানির সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেছে উল্লেখ করে তিনি টিবিএসকে আরো বলেন, "এবার আমরা সম্ভাব্যতা অধ্যয়নের পর্যায়ে আছি। আমরা খুব শিগগিরই একটি কার্যাদেশ দিব।"
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে পুলিশ টেলিকম অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর একযোগে আন্দোলনের এ সময়েই নতুন এ উদ্যোগে নামলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশের ধারণা, বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের আগে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য একটি শক্তিশালী সতর্কতা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টিবিএসকে বলেন, "আমাদের গোয়েন্দারা বলছে, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী দলগুলো নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তাই তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড নস্যাৎ করার জন্য আমাদের ভালোভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত।"
এসব ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরাকে অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য কার্যকর একটি হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন ক্যামেরা কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
"ক্যামেরাগুলোতে নাইট-ভিশন ফিচার থাকবে। তাছাড়া ফুটেজগুলোও হবে উন্নতমানের; যা বিশ্লেষণ করে আমরা যে কারো পরিচয়, গাড়ির নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য জানতে পারবো," বলেন তিনি।
বর্তমানে, বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কিছু ক্যামেরা রয়েছে। তবে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এগুলোর বেশিরভাগই অকার্যকর কিংবা মানসম্পন্ন নয়।
তাই, কর্তৃপক্ষও যতটা সম্ভব নষ্ট ক্যামেরাগুলো ঠিক করার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে সদর দপ্তরের সূত্র।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "গাজীপুর শহরে কিছু ক্যামেরা আছে। তবুও অপরাধীদের সহজে শনাক্ত করার জন্য প্রতিটি মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ক্যামেরা স্থাপন করে আমাদের সিসিটিভি সতর্কতা বাড়াতে হবে।"
"জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এড়াতে আমাদের সাহায্য করবে নতুন ক্যামেরাগুলো," তিনি যোগ করেন।
আগামী নির্বাচনে নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুলিশ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটের বাইরে অতিরিক্ত ১,২২৬ কোটি টাকা ব্লক বরাদ্দ চেয়েছিল পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি অনুসারে সরঞ্জাম এবং রসদ ক্রয়ের জন্য ব্যয় করা হবে এই অর্থ। ক্রয় তালিকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ, রায়ট গিয়ার, মোটর যান, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জাম এবং কম্পিউটার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ ইতোমধ্যে সরঞ্জাম কেনার জন্য বেশ কয়েকটি টেন্ডার দিয়েছে।
জামায়াতের ওপর রয়েছে কড়া নজরদারি
মেট্রোপলিটন এলাকা এবং বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা বর্তমানে বিরোধীদলগুলোর- বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর কার্যকলাপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সিলেট রেঞ্জ পুলিশের একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক বলেন, "রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি কোনো বাধা নেই তবে পুলিশ সদস্যদের জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।"
আরেক চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত সুপার টিবিএসকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে বলা হয়েছে তাদেরকে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, এর ফলে কোনো রাজনৈতিক দলকে তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হবে না, তবে কর্মসূচিগুলো অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সম্প্রতি বলেন, "আমরা তাদের (বিরোধীদল) বাধা দেব না যতক্ষণ না তারা সহিংস হয়ে কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি না করে বা জনগণকে আক্রমণ না করে।"
এদিকে, ৩১ ডিসেম্বর একটি হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জামায়াতের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
তিনি বলেন, "আমরা আগেও দেখছি জামায়াত-শিবিরের লোকেরা পুলিশকে বারবার এবং নৃশংসভাবে আক্রমণ করছে। গত ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ আক্রমণের ঘটনায় ১১ জন সদস্য আহত হন,"
"যদি তারা তাদের আগের হিংসাত্মক প্রকৃতিতে ফিরে আসে, আমরা তাদেরকে কিছুতেই ছেড়ে দেব না," যোগ করেন তিনি।