৫০% ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত সীসা: এসডো
দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙয়ের প্রায় অর্ধেক এবং ডেকোরেটিভ রঙয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অত্যধিক পরিমাণে সীসা রয়েছে, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে এ তথ্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, কমলা কালারের রংয়ের মধ্যে ৯৭০০০ পিপিএম পর্যন্ত সীসা পাওয়া গেছে, যেখানে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর অনুমোদিত সীমা হচ্ছে মাত্র ৯০ পিপিএম।
বুধবার এসডো ঢাকার নিজস্ব প্রকাশিত 'লেড ইন পেইন্টস: আ সিগনিফিকেন্ট পাথওয়ে অব লেড এক্সপোজার ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক গবেষণায় প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এসডো'র গবেষণায় লাল, হলুদ এবং সোনালি হলুদ রঙের ৩৯টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডসহ মোট ৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ৬৮ শতাংশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং ৩২ শতাংশ ছিল ডেকোরেটিভ রং এর নমুনা।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, নমুনাগুলোর মধ্যে ৩০.৮ শতাংশ ডেকোরেটিভ পেইন্টে ৯০-২৫০ পিপিএম পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাকি ৬৯.২ শতাংশ ডেকোরেটিভ পেইন্টে সীসার মাত্রা ছিল ৯০ পিপিএম এর কম।
তবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে ভয়াবহ মাত্রায় সীসার উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে। মোট নমুনার ৫০ ভাগেই এই উচ্চ মাত্রার সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, এর মধ্যে কমলা রঙে সর্বোচ্চ সীসার মাত্রা সনাক্ত হয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব খাতের কালার ব্যবহার হয় তার মধ্যে ফুড কালার, টয়, ক্যান্ডি, কসমেটিকস, টিস্যু, জামা কাপড় গুরুত্বপূর্ণ। যেগুলো থেকে দূষণ মানুষের শরীরে প্রবেশের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এসডো বলছে, সীসামুক্ত রং এর লোগো থাকা সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে সর্বোচ্চ ৯৭০০০ পিপিএম পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্টে এমন উচ্চ মাত্রায় সীসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক।
এসডো'র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, "আমরা ঘর সাজানোর জন্য ব্যবহৃত সীসাযুক্ত রঙের বিষক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শিশুদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে।"
"শিশুদের স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ প্রদান এবং নারীর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে রঙে সীসার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং প্রচলিত আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।"
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইজার ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন-বিএসটিআই-এর কেমিক্যাল বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, "উন্নয়নশীল দেশে সীসাযুক্ত রঙের সংস্পর্শে আসার কারণে শিশুরা আজীবন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।"
রঙে সীসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এসডো'র নির্বাহী পরিচালক, সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, "বাংলাদেশে প্রায় ৩৫.৫ মিলিয়ন শিশু সীসা দূষণের শিকার।"
"রক্তে সীসার নিরাপদ মাত্রা বলতে কিছু নেই। মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর সীসার ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর বিষক্রিয়া কমাতে আরো গুরুত্বসহকারে সীসার উৎস খুঁজে বের করতে হবে।"
২০১৮ সালে, বিএসটিআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে সীসা ব্যবহারের সহনশীল মাত্রা ৯০ পিপিএম নির্ধারণ করে।