লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে জেগে উঠেছে নতুন চর, ফসলের স্বপ্ন দেখছেন ভূমি হারানো অধিবাসীরা
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনা নদীর বুকে জাগছে নতুন নতুন চর। এরমধ্যে কয়েকটি চরের মাটি চাষের উপযোগী বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এসব চরের জমিতে চাষের উদ্দেশ্যেই সেখানে যাতায়াত শুরু করেছেন সে এলাকার অতীত অধিবাসীরা।
চরগুলোতে যাতায়াত করা অধিবাসীদের নিজেদের কিংবা পূর্ব পুরুষদের বসতি ছিল এই এলাকায়ই।
মেঘনা নদীতে বিলীন হওয়া লক্ষ্মীপুরের সাবেক চর কাঁকড়া মৌজায় জেগে ওঠা নতুন চরটি বুধবার (২৫ জানুয়ারি) পরিদর্শন করেন এমন দুই শতাধিক অধিবাসী।
নতুন এ চরটি জেগে উঠেছে কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের নবীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন পশ্চিম দিকে মেঘনা নদীর বুকে। চরটির আয়তন কত তা জানা যায়নি।
স্থানীয়রা সাবেক চর কাঁকড়া মৌজায় জেগে ওঠা চরটির নতুন নামকরণ করেছে 'ক্র্যাব আইল্যান্ড'।
একইদিন নতুন চরের নানা বিষয় পরিদর্শনে যান কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস, এসিল্যান্ড ফেরদৌস আরা, কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক।
আরো ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস, উপজেলা সার্ভেয়ার প্রমেশ্বর চাকমা, চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাঘা, চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহছান উল্যাহ হিরন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান দিদারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন।
বর্তমান চর এলাকায় অতীতে বসত বাড়িসহ জমি হারানো বাসিন্দা এবং উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ হিরণ টিবিএসকে বলেন, "নতুন চর এলাকায় তাদের বাড়িসহ কৃষি জমি ছিল। কিন্ত মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে তারা সব সম্পদ হারিয়েছেন। এখন ১০-১২ বছরের ব্যবধানে সেখানেই আবার ভূমি জেগে উঠেছে।"
"নতুন চরের মাটি ফসল ফলানোর জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া নদী ভাঙার কারণে কমলনগরে চাষের তেমন জমি নেই। এসব কারণে এখানকার সাবেক বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে এ বছরের বৈশাখ মাসে চরের জমিতে ধান চাষ করবেন," যোগ করেন তিনি।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুর রহমান দিদার জানান, নতুন চরে চাষাবাদ শুরু করার জন্য তারা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। স্থানীয়রা সবাই মিলে মিশে চরের বিশাল খালি জমিতে চাষ করতে চান।
একই এলাকার বাসিন্দা মো. হারুনুর রশিদ ডিলার জানায়, নদীর বুকে জেগে থাকা এ চরে চাষাবাদ শুরু হলে মেঘনার জেলেদের জন্য নিরাপত্তা বাড়বে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বর্তমানে খালি পড়ে থাকা এবং জনমানবহীন এ চর বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। চরে চাষাবাদ শুরু হলে মানুষের যাতায়াত বাড়বে এবং অপরাধ প্রবণতাও কমবে।
অন্যদিকে বারেক পলোয়ান নামের অপর একজন জানায়, চাষাবাদের পাশাপাশি তারা নিজেদের হারিয়ে যাওয়া ভূমি আবার ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চাইবেন এবং প্রয়োজনীয় আইনের আশ্রয় নিবেন।
স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন অফিস থেকে নেওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রায় ৩ যুগের বেশি সময় ধরে বর্তমান কমলনগর এলাকার মেঘনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার চর কাঁকড়া মৌজা, চরকালকিনি, উত্তর চর কালকিনি, দক্ষিণ চর কালকিনি, দক্ষিণ চর লরেঞ্চ মৌজা নামের কয়েকটি মৌজা পুরোপুরি মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। এখানকার প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার এলাকা নদী গিলে নিয়েছে।
কিন্তু এখন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উপজেলার পশ্চিমে মেঘনার বুকে প্রায় হাজার হাজার একরের কয়েকটি নতুন চর জেগে উঠেছে। এগুলোতেই এ বছর ফসল চাষ করবেন স্থানীয়রা।