ফুল বাজারে গোলাপের দাম চড়া, যশোরের গদখালীতে একদিনে ৩ কোটি টাকার বিক্রি
ভ্যালেন্টাইনস ডে ও পয়লা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে যশোরের গদখালি ফুলের বাজার জমজমাট। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক দিনেই গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে অন্তত ৩ কোটি টাকার গোলাপ কেনাবেচা হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় এদিন রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। দিবস দুটি ঘিরে এই অঞ্চলের চাষীরা গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
তারা বলছেন, এবার গোলাপের পাইকারি দামে রেকর্ড ভেঙ্গেছে। প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও রজনীগন্ধা ফুলের দামও চড়া। এবার চড়ামূল্যে ফুল বিক্রি করে গেল দুই বছরের করোনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ফুলের বাজার ভোর ভোরেই জমে ওঠে, বেশিরভাগ কেনাকাটা হয় এসময়েই। সোমবার ভোরে গদখালী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুব ভোরে কেউ বাই সাইকেলে-মোটরসাইকেলে, কেউবা ভ্যানে করে নানান জাতের ফুল নিয়ে গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে হাজির হচ্ছেন। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়। সাতটা নাগাদ হাট জমজমাট হয়ে উঠে।
উত্তরবঙ্গের বগুড়া, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারিরা ফুল কিনতে এ বাজারে আসেন। ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা বাজার প্রাঙ্গণ। ফুল কিনে ব্যবসায়ীরা বাসের ছাদে, ইঞ্জিনচালিত থ্রি-হুইলার ও পিকাপে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন। ১০টার মধ্যে হাটের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়।
এবারে ভ্যালেন্টাইনস ডে ও পয়লা ফাল্গুনের আগে রোববার ছিলো সবচেয়ে বড় হাট। এই হাটে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে গোলাপ চাষীদের। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উৎসবে গদখালীর গোলাপ সারাদেশে সৌরভ ছড়াবে। গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, একদিনেই গদখালী বাজার ও গোলাপের ক্ষেত থেকে অন্তত ১০ লাখ গোলাপ সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। অন্তত ৫০০ ফুলচাষী গোলাপ ফুল নিয়ে সোমবারে মোকামে আসেন।
এই এলাকার সৈয়দপুর এলাকার ফুলচাষী আব্দুর কাদের বলেন, '৩০ বছর ধরে নানান জাতের ফুল চাষ করেছি। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছি গোলাপ। সেই প্রথম থেকেই বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের দাম থাকে দ্বিগুণ। তবে গোলাপে কোনো বার ১৫ টাকার বেশি পাইকারি দাম পাইনি। এবার রেকর্ড ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। আর চায়না গোলাপ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এই দামে সব কৃষকই লাভবান হবে'।
গদখালি এলাকার ফুলচাষী ও ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, 'ভালোবাসা দিবসের আগে গদখালী বাজারে বরাবরই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছরের মধ্যে আজ এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। দামও চড়া। ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে'।
সালাম হোসেন নামে এক চাষী বলেন, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উপলক্ষে সবচেয়ে গোলাপ ও জারবেরা ফুলের চাহিদা বেশি। তরুণীরা চুলের খোঁপায় পরার জন্যে জারবেরা ফুল পছন্দ করেন। এজন্যে জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের চাহিদাও রয়েছে।
স্থানীয় ফুলের ব্যাপারি আল আমিন বলেন, পাঁচদিন আগে গোলাপের পাইকারি দাম ছিলো প্রায় অর্ধেক। আগামী আরো দুইদিন এমন চড়া দাম থাকবে।' এছাড়া জারবেরা প্রতিটা ১০ থেকে ১৫, রজনীগন্ধা ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪ থেকে ১৮, জিপসি প্রতিমুঠো ৫০ ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গাদা ফুল প্রতি হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, 'ভ্যালেন্টাইন ডে ও পয়লা ফাল্গুন ঘিরে গত পাঁচ দিনে ঝিকরগাছার গদখালী ফুল বাজার ও পানিসারা এলাকা থেকে অন্তত তিন কোটি টাকার গোলাপ ফুল সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে আজ (সোমবার) অন্তত ৩ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১০ লাখ গোলাপ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দিবস দুটি ঘিরে এই অঞ্চলের চাষীরা গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছে। রেকর্ড দামে গোলাপ বিক্রি করতে পেরে খুশি এখানকার গোলাপ চাষীরা'।
প্রসঙ্গত, যশোর জেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২০০ থেকে ১৫০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। এ অঞ্চলের ছয় হাজার চাষি ফুল উৎপাদন করে। সারাদেশের চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ ফুল যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ করা হয়।
ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, 'ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভাল হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন'।