ভালোবাসা দিবসে গোলাপ বিকিয়েছে চড়া মূল্যে, অসন্তোষ ক্রেতাদের
ভালোবাসা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে গোলাপের দাম স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল। দামের এই আকস্মিক বৃদ্ধির ব্যাপারটি বেশিরভাগ ক্রেতাই খুব সহজভাবে নিতে পারেনি। সেক্ষেত্রে প্রিয়জনের কাছে নিজের প্রেম নিবেদন করতে গুনতে হয়েছে বাড়তি অর্থ।
ঢাকার শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা নিঝুম মার্টিন ঠিক তেমনই একজন। তিনি এলাকাটির মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে থাকা এক অস্থায়ী দোকানে ফুল কিনতে গিয়েছিলেন। সেখানে বিক্রেতা প্রথমে একটি বড় গোলাপের দাম ২৫০ টাকা চেয়েছিল।
পরবর্তীতে দর কষাকষির পরে নিঝুম গোলাপটির দাম মাত্র ২০ টাকা কমাতে পারেন। সেক্ষেত্রে দাম কমাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি অন্য দোকান থেকে ৫৫০ টাকায় চারটি মাঝারি গোলাপ কেনেন।
এবারের ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে গত বছরের তুলনায়ও অত্যধিক দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্রেতারা ফুলের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে। কেননা দিবসগুলোকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে।
এক্ষেত্রে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে, রাস্তা ও গলির পাশে অস্থায়ী ফুলের দোকান বসেছিল। যা দিনটিতে বর্ধিত ফুলের চাহিদা পূরণ করেছে।
তানিম আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, "আগারগাঁও থেকে দ্বিগুণেরও বেশি দামে মাত্র পাঁচ-ছয়টি গোলাপ ফুল দিয়ে তৈরি তোড়া কিনতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ দর কষাকষি পরেও আমাকে ১ হাজার টাকা দিয়ে সেটি কিনতে হয়।"
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার ফুল বিক্রেতা শান্ত দাস ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাল্গুনের কারণে ফুলের দাম এবং চাহিদা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছেন।
এই ফুল বিক্রেতা বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সরবরাহ বেশি থাকে না। যার ফলে বিক্রেতাদের ফুলগুলো পাইকারি বেশি দামে কিনতে হয়, ফলে দাম বেড়ে যায়।
তবে পাইকারি বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে আবার ভিন্ন তথ্য জানা যায়। আগারগাঁও পাইকারি ফুল বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এবারে আমাদের পাইকারি বিক্রেতাদের মাথায় হাত। বিশেষ করে বাজারে ভারতীয় গোলাপ আসায় দেশি গোলাপের দাম পাইনি। বরং যে দামে কিনেছি তার থেকে কমে বিক্রি করতে হয়েছে।"
তিনি বলেন, "আমার প্রায় ১৩ লাখ টাকার ফুলের মধ্যে ৩ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারিনি। দেশি গোলাপ যে দামে কিনে রেখেছিল ব্যবসায়ীরা তার থেকে কমে বিক্রি করতে হয়েছে। খুচরা দোকানে গোলাপের দাম পেলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবারে ফুলের ব্যবসায় লাভ করতে পারেনি। অনেক ব্যবসায়ীরই প্রায় এক তৃতীয়াংশ ফুল অবিক্রীত রয়েছে।"
আগারগাঁও পাইকারি ফুল বাজার সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, পাইকারি দোকানে ভারতীয় গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা প্রতি পিচ। এছাড়া দেশি চায়না গোলাপ প্রতি পিচ ৫০-৫৫ টাকা এবং দেশি গোলাপ ১৫-২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি পিচ গোলাপ আনতে ব্যবসায়ীদের খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ টাকা। এছাড়া পাইকারি বিক্রেতাদের খামারিদের কাছ থেকে দেশি চায়না গোলাপ প্রতি পিচ ৪০-৫০ টাকা এবং দেশি গোলাপ প্রতি পিচ ১০-২০ টাকা দরে কিনতে হয়েছে।
আগারগাঁও পাইকারি মার্কেটে এবারে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি জানিয়েছে। এবার বাজারে মোট গোলাপের মধ্যে ৩৫ ভাগ ছিল ভারত থেকে আমদানি করা ফুল।
শেষ মুহূর্তে গদখালীতে হঠাৎ ফুলের দরপতন
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন ঘিরে গদখালির ফুল চাষিরা প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে দরপতন ঘটেছে ফুলের বাজারে। যে গোলাপ পাইকারিতে গত ৩ দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়, সেই গোলাপ গতকাল (বুধবার) বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা পিস। আর গত মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছিল ১০-১২ টাকা পিস হিসেবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি ভারত থেকে আসা ফুলের কারণে এবার বাজারে দরপতন ঘটেছে। এ ছাড়া অতিবৃষ্টি ও তীব্র শীতের কারণে উৎপাদন কমায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৫৫ কেজি গোলাপ আমদানি করা হয়েছে। প্রতি কেজি গোলাপের আমদানিমূল্য ছিল দুই ডলার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছায় এবার ১৫০ হেক্টর জমিতে অন্তত আড়াই হাজার কৃষক গোলাপ ফুলের চাষ করছেন। তবে ভারত থেকে গোলাপ আমদানির বিষয় জানা নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন।