চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে জাপানের দুই প্রতিষ্ঠান
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/02/16/img-20230215-wa0119.jpg)
চট্টগ্রাম নগরীর সব বর্জ্য সংগ্রহ করে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় হালিশহর ও আরেফিন নগর- এই দুটি বর্জ্য স্টেশনে নেওয়া হয়। তবে সেখানে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় দিন দিন বেড়ে চলেছে আবর্জনার স্তুপ। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে হালিশহরের স্টেশনটি আগামী ১৪ মাসে এবং আরেফিন নগরের স্টেশনটি আর মাত্র ৫ মাসেই বর্জ্যে ভরে যাবে; আর আবর্জনা ফেলা যাবে না স্টেশন দুটিতে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
সমীক্ষা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ১০০ টন আবর্জনা তৈরি হয়, যার ৬৮ শতাংশই গৃহস্থালির বর্জ্য।
যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আবর্জনার পুনর্ব্যবহার ও নিষ্পত্তির বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণাটিতে।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু-তে 'দ্য সেমিনার অন কমপ্লেশন অফ ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর ইন্টিগ্রেটেড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রিটমেন্ট ইন চট্টগ্রাম সিটি' শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উঠে আসে। জাপানি পরামর্শক সংস্থা জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এবং ইয়াচিও ইঞ্জিনিয়ারং কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এবং ইয়াচিও ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।
সমীক্ষা শেষে জাপানের কোম্পানি দুটি প্রতিদিন শহরের ১,০০০ টন বর্জ্য ব্যবহার করে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেমিনারে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের বিদেশ প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জেনারেল তাকাহাশি।
হালিশহরে প্রায় ৮০০ থেকে ১,০০০ টন বর্জ্য ফেলা হয় এবং আরেফিন নগরে ফেলা হয় ১,০০০ থেকে ১,২০০ টন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "বর্জ্য সংগ্রহের পর তা ল্যান্ডফিল্ডে নিয়ে বছরের পর বছর পচনের জন্য ফেলে রাখার নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। বিভিন্ন আধুনিক দেশে আমি বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনা করে কীভাবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন করে তা দেখেছি। এই অভিজ্ঞতাকে আমি চট্টগ্রামে কাজে লাগাতে চাই।"
"প্রতিদিন চট্টগ্রামে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হয়, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা থেকে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই; চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর আর টেকসই শহরে পরিণত করতে চাই," বলেন মেয়র।
প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, "উৎস থেকে বর্জ্যের শ্রেণিভিত্তিক পৃথকীকরণের চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে নগরীর ৩টি ওয়ার্ডে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। আমরা ক্যাম্পেইন চালানোসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা করছি।"
প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
নগরপরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, সলিড ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়।
"আমরা জনগণ রাস্তায় ও ড্রেনে বর্জ্য ফেলবো, এটি হতে পারে না। জনগণ হিসেবে দেশ ও শহরের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে। আর আমরা চাই- সবচেয়ে কম খরচে, কম কৌশলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ব্যবস্থাপনা। এটি নিশ্চিত করতে হবে," যোগ করেন তিনি।