ভারত থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানিতে কারেন্সি সোয়াপের প্রস্তাব
ডলারের ওপর চাপ কমাতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ আমদানির অর্থ ডলারের পরিবর্তে ভারতীয় মুদ্রায় পরিশোধ (কারেন্সি সোয়াপ) করতে প্রস্তাব দিয়েছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে প্রি-ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে আইবিসিসিআই-এর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, "আমরা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে এ প্রস্তাব দিয়েছি। এ বিষয়ে এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহযোগিতা চাই।"
তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার এবং আমদানি ১৬ বিলিয়ন ডলারের মত। ডলার সংকটের এই সময়ে ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ পণ্য আমদানি ভারতীয় মুদ্রায় করা গেলে এই ডলার দিয়ে অন্য দেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা যাবে।
সভা শেষে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমরা আশা করছি, সরকার শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।"
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল; এরমধ্যে রপ্তানির পরিমাণ ১.৯৮ বিলিয়ন এবং আমদানি হয়েছিল ১৩.৬৯ বিলিয়ন ডলারের।
এছাড়া, একই অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ বিলিয়ন ডলার; যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৬০০ মিলিয়ন।
আলোচনায় বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিআইসিসিআই)-এর পক্ষ থেকেও কারেন্সি সোয়াপ বা মুদ্রা অদলবদলের সুবিধা চালু করার জন্য কার্যকর উদ্যোগের প্রস্তাবের বিষয়টি উঠে আসে।
বিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইশাকুল হোসেন সুইট বলেন, "সরকারি অনুমোদনের পর বর্তমানে মাত্র দুই-তিনটি ব্যাংক চীনের সাথে কারেন্সি সোয়াপ সুবিধা চালু করেছে; তবে এটি খুবই ছোট পরিসরে চলছে।"
এদিকে, বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি এবং শাওমি বাংলাদেশের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষক মোঃ কামরুল হাসান মোবাইল ফোন বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের ভ্যাটের পরিবর্তে এক স্তরে ভ্যাট আদায় করার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, "বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আদায়ের ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা প্রায় ২২ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।"
এছাড়া, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (এটিএমএ) তামাকজাত পণ্যের ওপর অ্যাড ভ্যালোরেম ট্যাক্সের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কর আরোপ করে, এ ধরনের পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এর মাধ্যমে বাড়তি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হতে পারে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, উইমেন এন্টারপ্রেনারস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউইএনডি) সভাপতি ডি নাদিয়া বিনতে আমিন নারী উদ্যোক্তাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৭ লাখ টাকায় উন্নীত করাসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন
স্থানীয় শিল্পে কর বাড়ানোর ইঙ্গিত
সভায় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনীম স্থানীয় যেসব শিল্পের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, তাদের ওপর কর সুবিধা কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমরা মনে করি মোবাইল ফোনের (স্থানীয় মোবাইল ফোন কোম্পানি) সক্ষমতা অর্জন হয়েছে, এজন্য তাদের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে (চলতি অর্থবছর থেকে)। ট্যাক্স টু জিডিপি বাড়াতে ভবিষ্যতে আরো কিছু খাতে যাওয়া হবে।"
"আমাদের ওপর কর বাড়ানোর চাপ আছে। সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আছে, আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড) থেকেও আছে," জানান তিনি।
এছাড়া, কিছু শিল্পকে সক্ষমতা অর্জনের জন্য সুযোগ দেওয়া হলেও তারা তা অর্জন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, "অনেক শিল্প আছে, যাদেরকে অ্যাসেম্বলিংয়ে সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা পরবর্তীতে উৎপাদনে যেতে পারে। কিন্তু তারা এখনো অ্যাসেম্বলিংই করে যাচ্ছে।"