তহবিল সংকট, উদ্যোগের ৯ বছর পরও চালু হয়নি সিএমপির ডগ স্কোয়াড
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জসহ অন্তত ৫০০টি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা বাড়াতে ২০১৪ সাল থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডগ স্কোয়াডের কথা বলে আসছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। কিন্তু দীর্ঘ নয় বছরেও কাঙ্ক্ষিত সেই ডগ স্কোয়াড চালু করা সম্ভব হয়নি।
সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্কোয়াডের ২০টি কুকুর ও প্রয়োজনীয় জনবল বরাদ্দ হলেও আর্থিক সংকটে কুকুরের জন্য বাসস্থান তৈরীর কাজ শেষ না হওয়া বন্দর নগরীর নিরাপত্তায় এই গুরুত্বপুর্ণ স্কোয়াডটি চালু করা যাচ্ছে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (এস্টেট) মোস্তাইন হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ডগ স্কোয়াডের দুই তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রথম তলার কাজ শেষ করা গেছে। সময়মতো অর্থছাড় না পাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। তবে আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমরা ভবন তৈরীর কাজ শেষ করবো।'
তিনি জানান, নগরের মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনে দুই তলাবিশিষ্ট ডগ স্কোয়াড ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। দুইতলা ভবনে মোট ২০টি কুকুরের আবাসস্থল তৈরী হচ্ছে। প্রশিক্ষিত কুকুরের জন্য ঘরগুলো বিশেষভাবে তৈরি করতে হচ্ছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে টিবিএসকে জানান, ডগ স্কোয়ার্ডের জন্য ২০ জন কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। গত বছরের মে মাসে পুলিশের আট সদস্যের একটি দল নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নেন। সেখান থেকে দুই কনস্টেবল রাসেল চন্দ্র দে ও শাহ আলম আত্মগোপনে গেলে বাকি ছয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্ত যথাসময়ে ভবন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় স্কোয়াডের কুকুরগুলোসহ কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ শুরু করতে পারছে না চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, 'বিএম কনটেইনার ডিপোর দুর্ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিলো। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, ইপিজেড সহ হাজারো শিল্পকারখানা ও নগরবাসীর সুরক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত পুলিশ ফোর্সের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সিএমপিতে আরও আগেই ডগ স্কোয়াড যুক্ত হওয়া প্রয়োজন ছিলো। আশা করবো এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।'
২০১৪ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল প্রথমবারের মত সিএমপির জন্য ডগ স্কোয়াড গঠনের উদ্যোগ নেন। ২০১৫ সালের মার্চে পুলিশ সদর দপ্তরে এক বৈঠকে সিএমপিসহ দেশের চারটি মেট্রোপলিটন পুলিশে ডগ স্কোয়াড যোগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে জার্মানির শেফার্ড ও বেলজিয়ামের মেলিনোস জাতের কুকুর কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।
এ সিদ্ধান্তের প্রায় ছয় বছর পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) সানা শামীমুর রহমান স্বাক্ষরিত পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে আটটি কারণে ডগ স্কোয়াড গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
কারণগুলো হলো- চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা, ভিভিআইপির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিস্ফোরক শনাক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা, তারকাবিশিষ্ট হোটেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্টেডিয়াম, আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
চিঠিতে একজন উপকমিশনারের নেতৃত্বে ৫২ জনের একটি দল ও প্রাথমিকভাবে ২০টি কুকুর নিয়ে একটি নতুন ইউনিট গঠনের কথা বলা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে কুকুরের সংখ্যা ৩৫ টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫টি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০টি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০টি যুক্ত করা হবে।
প্রাথমিকভাবে স্কোয়াড শুরুর জন্য মাদকদ্রব্য শনাক্ত করতে ছয়টি ল্যাবরাডর, চারটি জার্মান শেফার্ড, কারেন্সি শনাক্ত করতে দুটি ল্যাবরাডর, বিস্ফোরক শনাক্ত করতে চারটি ল্যাবরাডর, চারটি জার্মান শেফার্ডসহ ২০টি কুকুরের কথা বলা হয়েছে।
একজন উপকমিশনারের নেতৃত্বে ডগ স্কোয়াডটি পরিচালিত হবে। দলে থাকবেন একজন ভেটেরিনারি অফিসার, একজন ইন্সপেক্টর, দুইজন উপ-পরিদর্শক, চারজন সহকারী উপ-পরিদর্শক, ৪০ জন কনস্টেবল (ডগ হ্যান্ডলার) ও তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, 'চট্টগ্রাম বন্দরনগরী হওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের অন্য যেকোনো ইউনিটের তুলনায় সিএমপির কার্যক্রম ও দায়িত্ব পালনের ধরনের ভিন্নতা রয়েছে। ব্যস্ত এ কর্মপরিবেশে দায়িত্ব পালন করতে যথেষ্ট সংখ্যক কুকুরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।'