বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস, মিশনের উদ্বৃত্ত অর্থ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ শক্তিশালী করতে সম্প্রতি দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে চিঠি দিয়ে উদ্বৃত্ত অর্থ দ্রুত দেশে পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার পর কয়েকটি দূতাবাস থেকে অর্থ ফেরতও পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশি হাইকমিশন ব্যাংক অব ইংলান্ডে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৯৭ হাজার ৪৬১ পাউন্ড জমা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ অর্থ, ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা (প্রতি পাউন্ড সমান ১২০ টাকা ৫৩ পয়সা হিসেবে) সরকারের হিসাবে জমা করেছে।
একইভাবে, ভারতের নয়া দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৯ হাজার ৯৮০ ডলার জমা করেছে। এর বিপরীতে প্রতি মার্কিন ডলার সমান ৯৬ টাকা ধরে গত ২২ জানুয়ারি সরকারের হিসাবে ৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জমা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, চীনের একটি দূতাবাস ও ভারতের একটি ডেপুটি হাইকমিশন থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হোক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সরকারের সকল লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ফলে দেশে বা বিদেশ থেকে সরকারকে অর্থ দেওয়া হলে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টেই জমা হবে। এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।
তবে কেনো এবং কতগুলো দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে অর্থে এসেছে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৮০টি দূতাবাস বা হাইকমিশন অফিস রয়েছে। এসব অফিসের নিয়মিত খরচের বাইরে বিশেষ প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরকার থেকে অর্থায়ন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের ডিপ্লোমেটিক অ্যান্ড কনস্যুলার সার্ভিসেস অ্যাকাউন্ট থেকে এই অর্থায়ন করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার থেকে পাঠানো অর্থ পুরোপুরি খরচ হয় না। দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোর যে অর্থ খরচ হয় না, সেগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠায়। অডিটও হয় সাথে সাথেই। কিন্তু এ বছর বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায় সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দূতাবাস ও মিশনগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে অব্যয়িত অর্থ দ্রুত ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক টিবিএসকে বলেন, সাধারণত দূতাবাস বা হাইকমিশনে বাজেট বরাদ্দের বাইরে বাড়তি টাকা থাকে না। রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানের সফর বা অন্য কোনো কারণে বাড়তি টাকা পাঠানো হলে, ঘটনা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই ওই টাকার হিসাব নিষ্পত্তি করে ফেলা হয়। ফলে দূতাবাস বা হাইকমিশনের কাছে অব্যয়িত টাকা বিশেষ থাকবে বলে তিনি মনে করেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সফর, বিদেশে অনুষ্ঠিত সম্মেলন বা প্রদর্শনীতে যোগদানসহ বিভিন্ন কারণে দেশ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশনে অর্থ পাঠানো হয়। ওই অর্থের যে অংশ খরচ হয় না, সেটা দেশে ফেরত পাঠায় দূতাবাস বা হাইকমিশন।
এ বছর কতগুলো দেশে কি পরিমাণ অর্থ পাঠানো হয়েছিলো তার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধনের সীতি নিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে সরকারের কৃচ্ছতা আরও বেশি। যে কারণে সব ধরনের বৈদেশিক সফর বন্ধ রাখা হয়েছে। দূতাবাস ও মিশনগুলোকেও খরচ কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব দূতাবাসে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর সুযোগ আছে, তাদেরকে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দূতাবাসগুলো সাধারণত পাসপোর্ট ইস্যু করে আয় করে থাকে। বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলো যত পাসপোর্ট চাচ্ছে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে। কারণ বিদেশে বসবাসকারি বাংলাদেশিরা তাদের পাসপোর্ট ফি বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করেন। এতেও সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ছে।