কনডেম সেলে বন্দি রয়েছে মোট দুই হাজার ১৬২ জন আসামি
আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ডের সাজা মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছে মোট দুই হাজার ১৬২ জন আসামি।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে কারা অধিদপ্তরের দাখিল করা এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদির এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ প্রতিবেদন দাখিলের পর কনডেম সেলের ভিতরে কী কী ব্যবস্থাপনা আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির।
পরে দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির কনডেম সেলের সংখ্যাসহ কনডেম সেলের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট।
চূড়ান্ত আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেম সেলে রাখার আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর রিট করা হয়েছিল।
গত বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি। সেখানে দেখা যায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য সেলের সংখ্যা মোট দুই হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য দুই হাজার ৫১২টি। আর মহিলাদের জন্য ১৪৫টি।
মোট দুই হাজার ৬৫৭টি সেলের মধ্যে বন্দি রয়েছে দুই হাজার ১৬২ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দির সংখ্যা দুই হাজার ৯৯ এবং মহিলা রয়েছে ৬৩ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে। এক হাজার ৭৮৪টি সেলের মধ্যে এ বিভাগে মোট বন্দি রয়েছে এক হাজার ২৯৫ জন। আর সর্বনিম্ন সেল রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। ওই বিভাগে ৫৪টি সেলের মধ্যে মোট বন্দি রয়েছে মাত্র পাঁচ জন। সেখানে কোনো মহিলা বন্দি নেই।
কারাগারের মধ্যে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে এক হাজার সেলের মধ্যে রয়েছে ৯৫১ জন বন্দি। তবে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে সেল থাকলেও কোনো বন্দি নেই। আর সেল নেই ঠাকুরগাঁও এবং কুড়িগ্রাম জেলায়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। আদালতে রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।