কয়লার দাম নিয়ে বিতর্ক, তবুও আদানি পাওয়ার থেকে আমদানি শুরু করছে বাংলাদেশ
আদানি পাওয়ারের অস্বাভাবিকভাবে উচ্চমূল্যের কয়লা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই কোম্পানিটি থেকে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ভারতীয় এ বিদ্যুৎ কোম্পানির গোড্ডা ১৬০০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আসতে যাচ্ছে দেশে।
আদানি এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট খাতের কর্মকর্তাদের মতে, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ এই প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট থেকে প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। একদিকে বাড়ছে সেচের চাহিদা, তার উপর সামনেই আসছে গ্রীষ্মঋতু।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান গতকাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, মার্চের প্রথম সপ্তাহে গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হতে পারে।"
আদানি প্রতিনিধিদের সাথে কয়লা-মূল্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি এই প্রতিবেদককে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
কিন্তু বিপিডিবির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, আদানি গ্রুপের বাংলাদেশ অফিসের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, তারা ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠকে বিপিডিবিকে আশ্বস্ত করেছেন যে গোড্ডা প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানিকৃত কয়লার দাম পায়রা এবং রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আমদানিকৃত কয়লার দামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
পাওয়ার ডিভিশনের সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে হাই ক্যালোরিফিক কয়লার দাম টন প্রতি ১১৫ ডলারের বেশি হলে সরবরাহকারীর কাছ থেকে ৪৫% ছাড় পায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষক কোম্পানি বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।
সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি বা সর্বোচ্চ স্পেসিফিকেশনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে নিম্ন-গ্রেডের কয়লার মতো বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করে এ ছাড় দেওয়া হয়েছে, সূত্র জানিয়েছে।
নিউক্যাসল সূচক অনুসারে, প্রতি টন হাই ক্যালোরিফিক কয়লার বর্তমান মূল্য প্রায় ২০৪ ডলার।
বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানির সূত্র থেকে জানা গেছে, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি টন কয়লা আমদানির জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১১২ ডলার।
তবে, আদানির গোড্ডা ১৬০০ মেগাওয়াটে আমদানিকৃত কয়লার দাম এখনও জানা যায়নি।
সম্প্রতি, উল্লেখিত প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে একটি ডিমান্ড নোট ইস্যু করার জন্য বিপিডিবিকে অনুরোধ করেছে আদানি পাওয়ার। সেখানে কয়লার দাম টন প্রতি উল্লেখ করা হয়েছে ৪০০ ডলার।
আদানি গ্রুপের সাথে পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) অনুযায়ী, কয়লার দাম হবে 'পাস-থ্রু'। অর্থাৎ, কয়লা আমদানির জন্য কোনো মূল্যসীমা বা ছাড় ব্যাতীত বাজারমূল্যই পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
বরিশালের পটুয়াখালীতে নির্মিত পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার মতো একই ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও, আদানি পাওয়ার তাদের কয়লার জন্য প্রায় ৬০% বেশি মূল্য চাইছে বলে উল্লেখ করেছেন বিপিডিবি কর্মকর্তারা।
আদানির উল্লেখিত কয়লার দাম এবং গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুতের দাম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল প্রকারের মিডিয়াতেই ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
বিদ্যুতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একক ক্রেতা, ফলে, কয়লার দাম আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করার দাবিতে আদানি গ্রুপকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিপিডিবি।
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দেশে এসেছে আদানি পাওয়ারের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। কয়লার দাম এবং প্রত্যাশিত ছাড় নিয়ে আলোচনা করার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই পক্ষ একটি বৈঠকে বসে।
আদানি বাংলাদেশ অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে আদানি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইওর নেতৃত্বে প্রতিনিধিরা বিপিডিবিকে আশ্বস্ত করে বলে, তাদের থেকে কয়লা আমদানি খরচ বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্রয়কৃত কয়লার দামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।