বিমানের প্রধান প্রশিক্ষকের পদ থেকে অপসারিত ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ
পাইলট নিয়োগে অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদকে প্রশিক্ষণ প্রধানের (চিফ অব ট্রেনিং) পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ।
গত ৯ মার্চ বিমানের জারি করা এক আদেশ অনুযায়ী, সাজিদ আহমেদ এখন থেকে লাইন পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) সাজিদের স্ত্রী সাদিয়াসহ ১৪ জন পাইলটের নিয়োগে অসঙ্গতির অভিযোগ ওঠে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত বিমানের তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে সাজিদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।
প্রসঙ্গত, চুক্তি ভিত্তিতে বিমান বাংলাদেশ সম্প্রতি ১৪ জন পাইলট নিয়োগ করলেও পুরো প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নীতি উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিতর্কিত ও অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়। এমনকি নিয়ম ভেঙে নিয়োগপ্রাপ্ত পাইলটদের অনুকূলে চুক্তি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
পিএমও'র রেফারেন্সে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিমানকে পাঠানো একটি গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাদিয়া আহমেদের এর আগে দুর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে; অদক্ষতার কারণে ইউএস বাংলা এবং রিজেন্ট এয়ারলাইনস থেকে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি। পরে বিমানের বোয়িং-৭৭৭ এর পাইলট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাদিয়াকে।
বিমানের চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদই নিয়োগের সময় স্ত্রী সাদিয়ার পরীক্ষা পরিচালনা করেন।
সাদিয়াকে বিমানের খরচে ৭৭৭-এয়ারক্রাফটের সিমুলেটর ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যাংককেও পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, এর আগে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ থেকে সিমুলেটর ট্রেনিংয়ের জন্য সাদিয়াকে ইস্তাম্বুলে পাঠানো হলে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
এবারে সাজিদের প্রভাবে সাদিয়ার জন্য সিমুলেটর সেন্টার রাতারাতি জাকার্তা থেকে ব্যাংককে পরিবর্তন করা হয়েছিল।
আগে বৈমানিক নিয়োগের চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল যে, প্রথম ফ্লাইট পর্যন্ত প্রশিক্ষণের খরচ পাইলটদের দিতে হবে। কিন্তু নতুন নিয়োগ পাওয়া ১৪ পাইলটের ক্ষেত্রে সেই বিধানটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে; কোন পক্ষ খরচ বহন করবে সেটিরও উল্লেখ করা হয়নি।
ট্রেনিং ডিপার্টমেন্ট এ ১৪ পাইলটের জন্য থাই ফ্লাইট ট্রেনিং সেন্টার থেকে ৪৪.৭৭ লাখ টাকার একটি পেমেন্ট ইনভয়েস পাঠানোর পর বিষয়টি বিমান কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাজিদ আহমেদ তার স্ত্রী সাদিয়াকে সুবিধা দিতেই চুক্তিপত্র থেকে প্রশিক্ষণ ব্যয়ের ধারাটি সরিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও সাদিয়ার জব এগ্রিমেন্টে একটি ধারায় বলা হয়েছে যে, তিনি তিন মাসের নোটিশে যে কোনও সময় চাকরি ছেড়ে যেতে পারেন। ফলত, সাদিয়া বিমান বাংলাদেশের খরচে প্রশিক্ষণ শেষ করে চাকরি ছেড়ে অন্য এয়ারলাইনসেও যোগ দিতে পারবেন।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বাকি পাইলটদেরও বিতর্কিত ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে; নিয়োগ নীতির ক্ষেত্রেও মেলেনি অনেক কিছু।
এ সমস্ত অনিয়মের আলোকে মন্ত্রণালয় বিমানকে পাইলট নিয়োগের বিষয়ে তদন্তের জন্য বলেছে।