হালদায় ঢুকছে সাগরের পানি, ওয়াসার পানিতে লবণ পাচ্ছেন চট্টগ্রামের বাসিন্দারা
কাপ্তাই লেকের পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জোয়ারের সঙ্গে সাগরের লোনা জল প্রবেশ করছে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে। ওয়াসার মোহরা প্রকল্পে সর্বোচ্চ ১৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ মিলেছে প্রতি লিটার পানিতে। দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সময় শোধনাগারের কার্যক্রম বন্ধ রেখেও খাবার পানিতে লবণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
নগরের পশ্চিমাংশের গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, তারা ওয়াসার পানিতে লবণ পাচ্ছেন।
মোহরা প্লান্টের পানি সরবরাহ করা হয় নগরের পতেঙ্গা, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর হালিশহর, সাগরিকা ও কাট্টলি এলাকায়। সেখানকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন কয়েকদিন ধরে পানির সংকটের পাশাপাশি পানিতে লবণ পাচ্ছেন।
সম্প্রতি ইপিজেডে একটি কারখানার কর্মকর্তা ও সবুজবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নবী খালেদ টিবিএসকে বলেন, 'ওয়াসার পানিতে গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে লবণ পাচ্ছি। পানি মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।'
বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কর্ণফুলীতে উপর থেকে নেমে আসা পানির চাপ কম থাকায় সাগরের পানি ঢুকছে। এই লবণাক্ততা সমস্যার কারণে জোয়ার-ভাটার সময় মোহরা প্লান্ট কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে এক থেকে দেড় কোটি লিটার পানির উৎপাদন কমেছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা এটি সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রতি লিটার পানিতে ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকলে তা পান করা যায়। ওয়াসার মোহরা প্রকল্পের নদীর পানিতে ১৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পন্থার মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চ ৪০০ মিলিগ্রামের মধ্যে পানি সরবরাহ করছি।'
ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, হালদা ও কর্ণফুলীর পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা নতুন নয়। কিন্তু এবার আগেভাগে সচেতন হয়েও লবণাক্ততা আটকানো যায়নি। উজানের পানির (কাপ্তাই লেকের) প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ত পানির সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এ অবস্থায় ডিপ টিউবওয়েলের পানির সংমিশ্রণের মাধ্যমে লবণের মাত্রা সহনশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া লবণাক্ততা সমস্যা মোকাবেলায় কয়েক মাস আগেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বৈঠক করে ওয়াসা। কাপ্তাই লেকে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে পিডিবিকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
১৯৮৭ সালে হালদা তীরে মোহরা প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ শুরু করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই এ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন নগরবাসী। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণ মিশ্রিত জোয়ারের পানি হালদা পর্যন্ত প্রবেশ করে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, 'পানির লবণাক্ততা দূর করার কোনো প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি চট্টগ্রাম ওয়াসাতে নেই। তাছাড়া এগুলো অনেক ব্যয়বহুলও। এখন আমরা নিয়মিত পানি পরীক্ষা করি। যখনই লবণাক্ততা বেশি দেখা যায় তখন ডিপ টিউবওয়েলের পানির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। অতিরিক্ত লবণাক্ততা থাকলে তখন প্লান্ট বন্ধ রাখা হয়।'
তবে এখনো পর্যন্ত মুদনাঘাট-পোমরা প্লান্টে লবণাক্ততার আঘাত পড়েনি বলে জানান প্রকৌশলী মাকসুদ।