সংযুক্ত আরব আমিরাত পুলিশের 'নজরদারিতে' আরাভ খান
পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান বর্তমানে দুবাইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) পুলিশের 'নজরদারিতে' আছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ও ইউএই পুলিশের একাধিক সূত্র অনুসারে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশের পর দুবাই পুলিশ মঙ্গলবার (২১ মার্চ) আরাভ খানকে আটক করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর তাকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, আরাভ খানকে একটি সেফ হোমে নিবিড় নজরদারিতে রেখেছে ইউএই'র আইন প্রয়োগকারী বাহিনীগুলো।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আরাভের বিষয়টি 'এখনো আনফোল্ডিং', এবং গণমাধ্যম সময় মতো জানতে পারবে।
তবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের কোনো পলাতক আসামির কোনো বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই।'
এর আগে দুবাইয়ের আরাভ জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের অনুরোধ গ্রহণ করে ইন্টারপোল।
তার আগে শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বলেছিলেন, আরাভের সোনার দোকানের উদ্বোধনে অংশ নেওয়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও কনটেন্ট নির্মাতা হিরো আলমকে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মঙ্গলবার দুবাইয়ে আরাভ খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিলন চিশতী নামক একজন জানান, সোমবার আরাভে গা ঢাকা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
'পরে মঙ্গলবার দুপুরে জানতে পারলাম দুবাই পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে এবং কয়েক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে,' তিনি বলেন।
এদিকে দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের জুয়েলারি দোকানটি মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন্ধ পাওয়া যায়। দোকানের বেশিরভাগ মালামাল অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ওই এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা জানান।
এদিন তার আরেক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আরাভ ট্রাভেলও বন্ধ ছিল।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেছেন, দুবাইয়ে আরাভ খানকে আটকের বিষয়ে তার কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য নেই।
'এনসিবি দুবাইয়ের কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ইমেইল না পাওয়া পর্যন্ত আমরা বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারব না। তাকে আটকের বিষয়ে আমাদেরকে কেবল মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে এবং দুবাই পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে,' পুলিশ সদরদপ্তরের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন।
'গোয়েন্দা শাখা ও পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মারফত তথ্য চাওয়া হয়েছে যাতে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইউএই ও ঢাকার মধ্যে আলোচনা শুরু করা যায়,' তিনি আরও বলেন।
এদিকে যদিও ইউএই কর্তৃপক্ষ সোমবার আরাভের রেসিডেন্স পার্মিট বাতিল করেছেন এবং তাকে আগে থেকে না জানিয়ে দেশটি ছেড়ে না যেতে বলেছেন, তবে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে আরাভ খানের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন, এ খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর সবার মনোযোগের কেন্দ্রে পরিণত হন আরাভ খান।
গত বুধবার (১৫ মার্চ) সাকিব ওই দোকান উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করেন। আরাভকে একটি ফেসবুক পোস্টে দেখার পর অনেকে তাকে হত্যা মামলার অভিযোগে পলাতক রবিউল ইসলাম হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এরপর পুলিশ আরাভের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে। পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, সাবেক একজন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার আর্থিক সহযোগিতায় দুবাইয়ে আরাভ খান তার সোনার ব্যাবসা শুরু করেছেন।
২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় খুন হন এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন তার লাশ বস্তায় ভরে গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মামলাটি তদন্ত করে পরের বছরের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল করে ডিবি। অভিযোগপত্রে পুলিশ উল্লেখ করে, রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চক্র ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত। তাদের লক্ষ্য ছিল অশ্লীল ছবি তুলে ধনী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজি করা।
২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকেও আসামি করা হয়। মামলায় মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেনসহ আরও দুই তরুণীকে আসামি করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লা ও লাকী বেগমের ছেলে।
২০২০ সালের ২০ অক্টোবর মামুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর রবিউল ইসলাম পরিচয় দিয়ে একজন ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। প্রায় নয় মাস কারাভোগের পর ওই যুবক দাবি করেন, তিনি আসল রবিউল ইসলাম নন, তার প্রকৃত নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কাছ থেকে মাসিক নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে আসামির পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি।
আদালত বিষয়টি তদন্ত করে ডিবিকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।