ঈদে ১,৫০০ কোটি টাকার বিক্রির আশা করছেন চট্টগ্রামের টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাকের বাজার, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে ১,৫০০ কোটি টাকার বেচাবিক্রির আশা করছেন। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক চাপ সত্ত্বেও এবারের ঈদে বড় মাপের বিক্রির আশা করছেন তারা।
"দেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, মালয়শিয়া, দুবাই ও থাইল্যান্ড থেকেও ব্যবসায়ীরা এখানে ঈদে বিক্রির জন্য কাপড় নিয়ে এসেছেন। ছোট দোকানগুলো নুন্যতম ২০ থেকে ৫০ লাখ এবং মেগাশপগুলো কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ করেছেন তারা," জানানলেন টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোছাইন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি আরও বলেন, "সবকিছুর দাম বেড়েছে, তবে এবার ঈদে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকার বিক্রি হবে বলে আশা করছি।"
চট্টগ্রামের বকশিরহাটের পুরোনো ভবনের নিকট দূরত্বে গড়ে উঠেছে শ-খানেক অত্যাধুনিক মার্কেট। যেখানে প্রায় ৩ হাজার ছোট-বড় দোকানে দেখা মিলবে দেশিয় ও আমদানি করা অত্যাধুনিক ফ্যাশনের জামা-কাপড়ের। কুমিল্লা, নোয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা এই বাজার থেকে পাইকারিতে ঈদের কাপড় কিনে নিয়ে যান। এছাড়া, দাম একটু কম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারাও ভিড় করেন এই বাজারে।
বুধবার টেরিবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গৃহিনী সানজিদা আক্তার। তিনি জানালেন, "টেরিবাজারে কেনাকাটায় সুবিধা। দরদাম করা যায়। তাছাড়া, এখানে কাপড়ের কালেকশনও বেশ ভালো। তাই আমরা ঈদের বাজার বলতে টেরিবাজারকেই বুঝি।"
তবে গতবারের চেয়ে এবার দাম কিছুটা বেশি বলে জানালেন তিনি। আরও কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপের পর তারাও জানালেন একই কথা।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে বাহারি জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, স্যুটের কাপড়, থানকাপড় তো আছেই, পাশাপাশি এখানে মিলছে জাকাতের কাপড়, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড়সহ সব ধরনের কাপড়। রোজার শুরুতেই নারী ক্রেতারা কিনেছেন থান কাপড় ও থ্রিপিস।
তবে রোজার প্রথম সপ্তাহ শেষে এবার দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম অনেক কম। মোটামুটি ক্রেতা দেখা গেছে নিউ রাজপরী, সানা, শারীকা, মনেরেখ, নবারুণ ট্রেডার্সের মতো ওয়ানস্টপ শপিংমলগুলোয়। এসব দোকানে ভারতের চেন্নাই, কলকাতা, দিল্লি ও জয়পুর থেকে শাড়ি আমদানি করা হয়েছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।
টেরিবাজারের ঐতিহ্যপূর্ণ মেগাশপ মনেরেখ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আবু হুরায়রা টিবিএসকে বলেন, "ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদার দিকটা মাথায় রেখে এবার বিদেশ থেকে কাতান, লিনেন, জামদানি, সুতি, নেট, জর্জেট, শিফন ও ডিজিটাল প্রিন্টের হরেক রকম কাপড় আমদানি করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশি কাপড়ের চাহিদাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।"
নিউ রাজপরীর সত্বাধীকারী মহিউদ্দিন মানিক বলেন, "বাছাই করে পোশাক কেনার সুযোগ টেরিবাজারে বেশি। দামও তেমন বেশি নয়। তাই ক্রেতারা এখানে বেশি আসেন।"
বকশিরহাট থেকে টেরিবাজার
ঊনিশ শতকের গোড়া থেকেই বকশিরহাট ছিল থান কাপড়ের জন্য অঞ্চল বিখ্যাত। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত মারওয়ারি ব্যবসায়ীরা এই বাজারে কাপড় নিয়ে আসতেন ভারতের তামিলনাডু, উড়িষ্যা, আসাম, মিয়ানমারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তবে গত পাঁচ দশক ধরে এই ব্যবসার দখল নিয়েছেন চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা; বাজারের নাম দিয়েছেন টেরিবাজার। পুরানো দোকানগুলোর কাছে তারা আধুনিক বাজার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং শুধু থান কাপড়ের পরিবর্তে তৈরি পোশাকের বাজার বৃদ্ধি করেছেন।
এই বাজারে একই ছাদের নিচে সব ধরনের পোশাক, অলংকার, প্রসাধনী, জুতাসহ অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়। এসব দোকানে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। তবে ঈদে বিক্রির পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।