স্বাস্থ্যসেবায় দেশসেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যসেবা, বহির্বিভাগে সেবা, চিকিৎসা সরঞ্জামের পর্যাপ্ততা ও ব্যবহারসহ হাসপাতালের সার্বিক সেবা ও সুবিধা বিবেচনায় জাতীয় পর্যায়ে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক)।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২০২২ সালের ডিসেম্বর) মূল্যায়ন সূচকে দেশের ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে চমেক এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের টার্শিয়ারি লেভেলের একমাত্র হাসপাতাল এই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মূল্যায়ন পত্রে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় (ফ্যাসিলিটি স্কোরিং) মোট ৮০ স্কোরের মধ্যে চমেক হাসপাতালের প্রাপ্ত স্কোর ৬৩। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬২.৩৬। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির প্রাপ্ত স্কোর ৬২.১৫। ৬১.৭৮ স্কোর নিয়ে ৪র্থ অবস্থানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৫ম অবস্থানে থাকা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬১.৭৫।
এরপর যথাক্রমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (বগুড়া), কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ফরিদপুর), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থান।
এ বিষয় জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০২২ সালের ডিসেম্বরে মূল্যায়নের ফলাফলে দেশের বাকি ১৬টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে আমাদের হাসপাতাল। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এই অবস্থান নিজেদের প্রচেষ্টাকে আরো উৎসাহিত করবে।"
বরাদ্দ কম, সাফল্য বেশি চমেকের
২০২২-২৩ সালে দেশের আটটি শীর্ষ হাসপাতালের অর্থ বরাদ্দ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসেবায় দেশ সেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতারের বরাদ্দ ছিলো ১৩০ কোটি ১০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। অপরদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বরাদ্দ ছিলো ২৫৪ কোটি ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা; যা দেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থ বরাদ্দে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৬১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া হাসপাতালটি স্বাস্থ্য সেবায় রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪৯ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে স্বাস্থ্য সেবায়ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এছাড়া স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বরাদ্দ ১২১ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার, সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বরাদ্দ ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৯৪ হাজার, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০৩ কোটি ২৮ লাখ ১৯ হাজার ও শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারের বরাদ্দ ১০২ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'স্বাস্থ্য সেবায় কোন হাসপাতাল কত বরাদ্দ পেলো সেটি দিয়ে হাসপাতাল সেবার মান যাচাই করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য সেবা একটি ব্রত, সেখানে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা দিয়েই সাফল্য আসে। আমি মনে করি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ, চিকিৎসক, নার্সসহ সকলের আন্তরিকতায় এই অর্জন এসেছে। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্বের।'
প্রায় ৬৬ বছর আগে ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম ছাড়াও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার প্রায় চার কোটি মানুষ চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছর অর্থাৎ ২০২১ ও ২০২২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর হার বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। বহির্বিভাগে রোগীর হার বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। একইসঙ্গে জরুরি বিভাগে রোগী বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।