নীরব মহামারি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: আক্রান্ত ১১ লাখ, অধিকাংশই নারী
যথাযথ চিকিৎসা আবিষ্কার না হওয়া ডিমেনশিয়া (চিত্তভ্রংশ বা ভুলে যাওয়ার রোগ) ধীরে ধীরে নীবর মহামারির আকার ধারণ করছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১১ লাখেরও বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন— যাদের প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ ভবনে আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত 'ডিমেনোশিয়া কেয়ার এন্ড রাইটস' শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার। তিনি জানান, বাংলাদেশে ২০২০ সালে ১১ লাখ ডিমেনশিয়া রোগী পাওয়া গেছে। এসব রোগীদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৮০ হাজার, যা ২৪.৫ শতাংশ। এছাড়াও, নারী ডিমেনশিয়া রোগী রয়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার, যা ৭৫.৫ শতাংশ।
২০২৫ সালে এই রোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৭ হাজারে পৌঁছাবে বলে ধারণা দেন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, "২০২০ সালের আমরা যেই সংখ্যক ডিমেনশিয়া রোগী পেয়েছি, তারমধ্যে মাত্র একভাগ পুরুষ, আর বাকি তিনভাগই নারী। নারীদের এই রোগ থেকে সুরক্ষায় আমাদেরকে সামাজিক সচেতনতায় গুরুত্ব দিতে হবে।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, "ডিমেনশিয়া নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আরও গবেষণা করা উচিত। সঠিক চিত্রটি পেলে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে। চিকিৎসাখাতে আমরা নানান বিষয় গবেষণা করি। এক্ষেত্রে ডিমেনশিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে গবেষণার দরকার আছে।"
নূরজাহান বেগম বলেন, "ডিমেনশিয়া রোগীদের স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার জন্য যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে আন্তরিকতা নিয়ে রোগীকে বোঝা; তার কষ্টটুকু নিজের মতো করে উপলব্ধি করা। রোগীর সেবা যত্ন যিনি করবেন, তার ভেতরে যাতে এ বোধটা তৈরি হয়, সেটা নিয়ে ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ আমাদের খুবই দরকার।"
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন। তিনি মেডিকেল শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ডিমেনশিয়া চিকিৎসা ও এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দেন।
সেমিনারে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে আরও ছিলেন— এনএসডিএ-র নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ, নিউরোলজি এবং নিউরো-ইলেক্ট্রোফিজিওলজি বিশেষজ্ঞ ডা. বদরুল ইসলাম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার হাসিনা মোমোতাজ। এছড়া, কলকাতা চ্যাপ্টারের আলঝেইমারস অ্যান্ড রিলেটেড ডিসঅর্ডার সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল নীলাঞ্জনা মৌলিকও অনলাইনে সেমিনারে যোগ দেন।