স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অবদান সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির প্রচেষ্টা ‘প্রাইমেট ফেয়ার-২০২৩’
বন ও বন্যপ্রাণী একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসব বন্যপ্রাণীর মধ্যে প্রাইমেট গোত্রীয় প্রাণীরা আমাদের প্রতিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, অর্থাৎ বনের ভারসাম্য রক্ষায় এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফুলের পরাগয়ন থেকে শুরু করে বনের বীজের বিস্তার, ক্ষতিকর পোকামাকড় খাওয়াসহ আরো বিভিন্ন কাজ করে তারা, যা বন ও তার জীববৈচিত্র রক্ষায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে। বাদুড় ও পাখিরাও ছোট ছোট গাছের বীজ বিস্তারে সহায়তা করে, কিন্তু প্রাইমেট গোত্রীয় প্রাণীরা বড় বড় গাছের বীজ বিস্তারে অবদান রাখে। মূলত প্রাইমেট ও অন্যান্য প্রাণীরা মিলিতভাবে বনের পরিধি বিস্তার করে। অথচ খাদ্য সংকট, বাসস্থান সংকট, নির্বিচারে শিকার, পাচার ইত্যাদি আরও বিভিন্ন কারণে তারা বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। জনসচেতনতা পারে এই অবস্থায় থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে।
এই জনসচেতনতা তৈরীর বিষয়টাকে সামনে রেখে ৮ই এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার পূর্ব খেদাছড়া ইউনিয়নে "প্রাইমেট ফেয়ার-২০২৩" নামের একটি সম্পুর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকের একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।
মেলার অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে ছিল বাংলাদেশের প্রাইমেট প্রাণীদের পরিচিতি, তাদের বাসস্থান সম্পর্কে ধারণা, প্রাইমেটদের কিছু মজার তথ্য, সাথে ছিল কিছু মজার খেলা, বিশেষ আকর্ষণ ছিল পিটাছড়া পাঠাগারের শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত গান এবং অসাধারণ পাপেট শো– যার বিষয়বস্তু ছিল লজ্জাবতী বানরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আর প্রকৃতিতে তাদের উপকারিতা।
মেলায় শিশু-কিশোরেরা তাদের অংশগ্রহণকালে কতোটা মনোযোগী ছিল তার উপর ভিত্তি করে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। মেলায় সাত জন শিশুকিশোরকে প্রাইমেট প্রটেক্টর বা প্রাইমেট রক্ষী উপাধি দেয়া হয়েছে। এই সাত জন শিশুকিশোর তাদের গ্রামে এবং আশেপাশের বানর গোত্রীয় প্রাণী রক্ষায় সরাসরি ভূমিকা পালন করবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত চলা এই মেলায় প্রায় দেড়শরও বেশি শিশুকিশোর অংশগ্রহণ করে।
জার্মান সংস্থা- প্লাম্পলরিস ই ভি এবং পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ এর যৌথ প্রচেষ্টায় মেলাটির আয়োজন করা হয়।
মেলার মূল পরিকল্পনাকারী মার্জান মারিয়া বলেন, 'শিশু কিশোরদের প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ প্রাইমেটদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া, পরিবেশ ও প্রতিবেশে তাদের অবদান সম্পর্কে শিশু কিশোরদের জানানোর জন্যই এ মেলার আয়োজন'।
অপর আয়োজক হাসান আল রাজী বলেন- বন সংরক্ষণে এবং বনের বিস্তারের জন্য বানর গোত্রীয় প্রাণীর কোন বিকল্প নেই। বিভিন্ন কারণে এই প্রাণীরা কমে যাচ্ছে। মূলত এদের রক্ষা করার জন্য জনসচেতনতা তৈরীর কোন বিকল্প নেই। এই সচেতনতা মূলত যদি আমরা শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলেই সংরক্ষণে সফলতা আসতে পারে।
মেলার সহযোগী সংঘটন পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠতা মাহফুজ আহমেদ রাসেল বলেন, এ ধরনের মেলা বা প্রোগ্রাম আমরা সচরাচর আয়োজন করে থাকি। তবে প্রাইভেট বা বানর গোর্ত্রীয় প্রাণীর এই মেলা সম্পূর্ণ নতুন একমাত্রা যোগ করলো আমাদের পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগে। পরবর্তীতে এটা আমরা জেলা-ভিত্তিকভাবে আয়োজন করার পরিকল্পনা মাথায় রেখেছি।